Skip to main content

শিশুদের শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র - শিখা চক্রবর্তী

 

Sishuder Sri Sri Thakur Anukul Chandra(Full Episode)

পিতা শিবচন্দ্র


১৮৫৬ সালে, পাবনার গােয়াখাড়া গ্রামে শিবচন্দ্র চক্রবর্তীর জন্ম। শৈশবে তিনি নিজের বাবাকে এবং কৈশােরে
মাকে হারান। নিদারুণ এই বিয়ােগ-ব্যথা সহ্য করেও, সৎপথে থেকে তিনি জীবনে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন।
পাবনায় নানান সরকারি কাজে তিনি কন্ট্রাক্টারির (ঠিকাদারি) কাজ করতে থাকেন। পরে ময়মনসিংহের রাণী
অমৃতসুন্দরীর জমিদারির কাজে ম্যানেজার হিসেবে নিযুক্ত হন। এই সময় তিনি প্রজাদের স্বার্থে ও মঙ্গলের জন্য
আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। ক্রমে, তিনি প্রজাদের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছিলেন। শিবচন্দ্রের বিচক্ষণতা ছিল অতুলনীয়।
তিনি বলতেন—মানুষের উপকার করবে, কিন্তু এ-ও দেখবে যে কেউ যেন তােমাকে ঠকাতে না পারে।
নিজের শ্বশুরমহাশয়ের দেহরক্ষার পর শ্বাশুড়ীমাতার অনুরােধে শিবচন্দ্র তার সম্পত্তি রক্ষা করতে এগিয়ে
আসেন। স্বীয় বুদ্ধিবলে, তিনি শ্বশুরকূলের শরিকদের অসৎ উদ্দেশ্যকে প্রতিহত করে দেন।
শিবচন্দ্রের হৃদয় ছিল কোমল। এক সময়ে তার চালের ব্যবসা ছিল। গ্রামের বহু দরিদ্র মানুষ তার কাছে ধারে,
কাগজে সই করে অনেক মাল নিয়ে যেত। মৃত্যুর আগে শিবচন্দ্র সেই সমস্ত কাগজ নষ্ট করে দিয়ে অনেক অভাবী
মানুষকে ঋণের দায়ভার থেকে মুক্ত করে যান।

মাতা মনমোহিনী

এখনকার বাংলাদেশের, পাবনা জেলার।
হিমাইতপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত চৌধুরী পরিবারে
১৮৭০ সালে যে কন্যাসন্তানটির জন্ম হয়।
তার নামই মনােমােহিনী। বাড়ির সবাই তাঁকে।
তিনি রচনা করতে পারতেন স্বচ্ছন্দে। একবার।
জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী তার (মাতা।
মনােমােহিনী দেবী) কর্মকুশলতা দেখে মুগ্ধ।
হয়ে বলেছিলেন—এমন ব্যক্তিত্বময়ী জননী।
তিনি আগে কখনও দেখেননি!
মাতা মনােমােহিনা
‘মনু’ বলে ডাকত। ছােটোবেলা মনােমােহিনীর
মনপ্রাণ সবসময় ভগবান-দর্শনের আকাঙক্ষায়
ব্যাকুল হয়ে থাকত। একদিন ঠাকুরঘরে ধ্যানের
সময় তিনি আগ্রা সৎসঙ্গের সদগুরু শ্রীহুজুর
মহারাজকে দেখতে পান। তখন তার চোখের
সামনে আলােক-রাশির মত চার-অক্ষরের
সৎনাম ভেসে ওঠে। হুজুর মহারাজের সাথে
তার দেখা হয় আরও পরে। গুরুদেব হুজুর
মহারাজের নির্দেশে মনােমােহিনী ঐ সৎনাম
ভজনে রত থেকে সাধন-জীবন যাপন করতে
থাকেন।
আপন বুদ্ধিবল, সাহসীকতা আর
ভালােবাসার জোরে তিনি ধীরে ধীরে গ্রামের
মানুষদের অভিভাবিকা হয়ে ওঠেন। পাড়ার
মহিলাদের একসঙ্গে নিয়ে তিনি যেমন নিয়মিত
রামায়ণ-মহাভারত-পুরাণ পড়তেন, তেমনি
কেউ দুষ্ট আচরণ করলে তাকে শাসনে-
সােহাগে ভালাে করে তুলতেন। শত্রুরা গ্রামে
গা-জোয়ারি করতে এলে তিনিই আগে গিয়ে
রুখে দাঁড়াতেন। অভাবী-আর্ত মানুষের বিপদে-
আপদে তিনিই ছিলেন ভরসা। গান ও কবিতাও
তিনি রচনা করতে পারতেন স্বচ্ছন্দে। একবার 
জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী তাঁর (মাতা
মন মোহিনী দেবী) কর্মকুশলতা দেখে মুগ্ধ
হয়ে বলেছিলেন—এমন ব্যক্তিত্বময়ী জননী
তিনি আগে কখনও দেখেননি।

আগমন বার্তা

১৮৭৯ সালের এক শুভদিনে শিবচন্দ্র চক্রবর্তীর (বয়স ২৪) সাথে মনােমােহিনী দেবীর (বয়স ৯) বিবাহ সম্পন্ন
হল। এর কয়েকবছর পর মনােমােহিনী দেবী অন্তঃসত্ত্বা হলেন। এই সুখবরে পরিবারের সবাই আনন্দে মেতে উঠল।
এইসময় একদিন দুপুরবেলায় একজন দীর্ঘকায়, জটাজুটধারী সন্ন্যাসী শিবচন্দ্রের গৃহে অতিথি হলেন। মনােমােহিনী
দেবী পরম যত্নে তার সেবা করলেন। সন্ন্যাসী এতে তৃপ্ত হলেন। যাওয়ার সময় তিনি বাড়ির সবাইকে বলে
গেলেন যে এই পরিবারে এমন একজন শক্তিমান পুত্রের জন্ম হবে যিনি জগতের বহু মানুষের অধীশ্বর হবেন এবং
পৃথিবীর মহামঙ্গল সাধন করবেন।
তবে একই সাথে সন্ন্যাসী এও বলে
গেলেন যে এই পরিবারের একমাত্র
ছেলের মৃত্যু হবে। সন্ন্যাসীর ভবিষ্যৎ
বাণী শুনে সবাই যেমন আনন্দিত
হলেন, তার চেয়েও বেশি চিন্তিত
হয়ে পড়লেন। বাড়ির একমাত্র পুত্র
বলতে কৃষসুন্দরী দেবীর পুত্র
যােগেন্দ্রনারায়ণ। সে মনােমােহিনী
দেবীর ভাই। তাহলে কি যােগেন্দ্রেরই
মৃত্যু হবে?
ক্রমে গর্ভাবস্থার ১০ মাস পেরিয়ে
গেলেও মনােমােহিনী দেবীর সন্তান
প্রসবের কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে।
। যখন এগারাে মাস পূর্ণ হল,
তখন বাড়ির একমাত্র পুত্র
যােগেন্দ্রনারায়ণের, কিছুদিন
রােগভােগের পর, মৃত্যু হল। সন্ন্যাসীর
নির্মম ভবিষ্যৎ বাণীর শেষেরটি 
সত্যি হল! একমাত্র পুত্রের অকালমৃত্যুতে কৃষ্ণসুন্দরী ভেঙে পড়লেন। এদিকে তার কন্যা মনােমােহিনী দেবীর
প্রসবের সময়ও পেরিয়ে যাওয়ায় নানা অমঙ্গলের কথা চিন্তা করে কৃষ্ণসুন্দরী আরাে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন।
মনােমােহিনী দেবী এরই মধ্যে সংসারের কাজ সামলে তারই গুরুদেব শ্রীহুজুর মহারাজের নামধ্যানে সময়
কাটান। মনােমােহিনী দেবী একসময়ে আকুল হয়ে হুজুর মহারাজের কাছে প্রার্থনা জানিয়েছিলেন যে তার যেন
গুরুদেবের (হুজুর মহারাজ) মতই লােকপালী আদর্শ চরিত্রের এক সন্তান হয়। গুরুদেব অভয় দিয়ে মনােমােহিনী
দেবীকে বলেছিলেন যে তার প্রথম পুত্র একজন মহাপুরুষ হবে। সব মিলিয়ে, সেই শুভক্ষণের প্রতীক্ষায় বাড়ির
সবাই দিন গুনতে থাকে।

আবির্ভাব

এলাে সেই শুভক্ষণ। সূর্যের
আলােয় উদ্ভাসিত ভারী সুন্দর এক
সকাল। শুক্রবার, ইংরেজি ১৮৮৮
সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর। প্রকৃতির
রূপলাবণ্যে পরিপূর্ণ হিমাইতপুর
গ্রাম। মনােমােহিনী দেবী তখন আঁতুড়
ঘরে। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা
করছে সদ্যোজাত শিশুর ভূমিষ্ঠ
হওয়ার খবর শােনার জন্যে। পাশে
বয়ে যাওয়া পদ্মানদীর ঢেউগুলিও
কী যেন অজানা আনন্দে হিমাইতপুর
গ্রামের নদীতটে আছড়ে পড়ছে!
মায়েরা উলুধ্বনি করে উঠল। মাতা
মনােমােহিনী দেবীর কোল আলাে
করে জন্ম হল এক জ্যোতির্ময়
দেবশিশুর। অপরূপ তার রূপের
ছটায় আঁতুড় ঘর আলােয় আলােকিত।
সবাই সবিস্ময়ে তাকিয়ে দেখলেন যে সদ্যোজাত এই শিশু না কেঁদে মিটিমিটি হাসছে আর চারিদিকে দেখছে।
সাধারণতঃ মায়ের গর্ভে ১০ মাস থাকার পর শিশুর জন্ম হয়। কিন্তু এই দেবশিশুর জন্ম হল মায়ের ১২
মাস গর্ভধারণের পর।
পরবর্তীকালে এই দেবশিশুই হয়ে উঠলেন বিশ্বপিতা পরমদয়াল শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র।
অন্নপ্রাশনের সময় একটি কবিতার মাধ্যমে সেই শিশুর নাম ‘অনুকূল’ রেখেছিলেন স্বয়ং তার মা মনােমােহিনী।
চার লাইনের সেই অপূর্ব কবিতাটির প্রতি লাইনের প্রথম অক্ষরগুলি জুড়ে দিলে পাওয়া যায় ‘অনুকূল’ শব্দটি।
সেই কবিতাটি ছিল এইরকম

অ—“অকূলে পড়িলে দীনহীনজনে
নু - নুয়াইও শির, কহিও কথা।
কু - কূল দিতে তারে সেধাে প্রাণপণে
ল - লক্ষ্য করি তার নাশিও ব্যথা।”

এই কবিতাটিই যেন পরবর্তী সময়ে পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দরদী-চরিত্রের উজ্জ্বল আভাস।
মা যেন সেদিন মেপে দিলেন অনন্ত ভালবাসার একটি অবশ্যম্ভাবী সম্ভাবনাকে।

উমেশ চন্দ্রের অনুভূতি

অনুকূলচন্দ্রের বয়স তখন সবে ১০ মাস। মা মনােমােহিনী দেবী অনুকূলচন্দ্রকে নিয়ে হরিপুরা গ্রামে আত্মীয়
উমেশচন্দ্র লাহিড়ী মহাশয়ের বাড়ি বেড়াতে গেলেন। উমেশচন্দ্র নিত্য শ্রীকৃষ্ণের (গােপালদেব) একটি পিতলের
বিগ্রহকে পূজা করেন। সুন্দর সিংহাসনে সেই বিগ্রহ বিরাজমান। ঠাকুরঘরে, আপনমনে তিনি চোখ বুজে
গােপালদেবের ধ্যান করতেন।
একদিন পূজার সময় শিশু অনুকূলচন্দ্র সবার অজান্তে গােপালদেবের মূর্তিখানা সরিয়ে নিজেই সেই সিংহাসনে
বসে মৃদুমন্দ হাসতে থাকে। পিতলের মূর্তি মেঝেতে পড়ে যাওয়ায় যে শব্দ হল তাতে উমেশচন্দ্রের ধ্যান ভেঙে
যায়। চোখ খুলে উমেশচন্দ্র এই দৃশ্য দেখে তাে হতবাক! মাতা মনােমােহিনীকে ডেকে তিনি এই দৃশ্য দেখালেন।
উমেশচন্দ্র মনে মনে বিরক্ত হলেন। মনােমােহিনী দেবী শিশুকে নিয়ে তাড়াতাড়ি ঠাকুরঘরের বাইরে চলে এলেন
উমেশচন্দ্র আবার পূজায় বসলেন। নতুন
করে গােপালদেবকে ভােগ নিবেদন করে
গভীর ধ্যানে মগ্ন হলেন। খানিকবাদে আবার
টুং’ শব্দের আওয়াজে উমেশচন্দ্রের ধ্যান
ভাঙল। চোখ মেলে দেখতে পেলেন যে
গােপালদেবের মূর্তি মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি
খাচ্ছে। আর শিশু ঐ সিংহাসনে বসে হাসছে।
ঠিক আগের বারের মতন। উমেশবাবু এবার
ভীষণ রেগে গেলেন। মনােমােহিনী দেবীকে
ডেকে বললেন, শিশুকে অন্য ঘরে আটকে
রাখতে। আর, দারােয়ানকেও তার সাথে বলে
দিলেন যে অনুকূলচন্দ্র যাতে ঠাকুরঘরে না
ঢুকতে পারে সেজন্যে পাহাড়া দিতে।
তৃতীয়বারের মত উমেশচন্দ্র নিশ্চিন্তমনে
আবার ধ্যানে বসলেন। খানিক সময় এভাবে
কাটল। কিন্তু তারপরই ঘটল সেই একই 
ঘটনা। টুং শব্দে গােপালদেবের মূর্তি মেঝেতে পড়ে গেল আর শিশু অনুকূলচন্দ্র কেমন করে আবার সেই
সিংহাসনে বসে হাস্যমান। এই দৃশ্য দেখে উমেশচন্দ্র এবার চিৎকার করে উঠলেন। বাড়িশুদ্ধ লােক উমেশবাবুর
সেই চিৎকার শুনে দৌড়ে ঠাকুরঘরে চলে এলাে। মনােমােহিনী দেবী এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখে অতিষ্ঠ হয়ে
শিশুকে কোলে তুলে নিয়ে তাকে চপেটাঘাত করে বলে উঠলেন, তুই বার বার কেন বিগ্রহ নিচে ফেলে দিয়ে
ঐ সিংহাসনে বসছিস্? শিশু অনুকূলচন্দ্র তখন কাদো কাদো স্বরে মাকে বলে উঠল- “ও (উমেশচন্দ্র) আমায়।
দা-কে (ডাকে) কেন?” অস্ফুটভাবে শিশুর মুখে এই কথাগুলি শুনে এবার উমেশচন্দ্র চমকে উঠলেন! একী
শুনলেন তিনি!!
আনন্দে মনােমােহিনী দেবীর কোল থেকে শিশুকে পরমাদরে নিজের কোলে তুলে নিয়ে আত্মহারা হয়ে বার
বার শিশুকে (অনুকূলচন্দ্রকে) বলতে থাকেন—“তুমি আমার ডাক শুনেছাে? তুমি আমার ডাক শুনেছাে?”
এভাবেই উমেশচন্দ্রের মনে এই ধারণাই দৃঢ় হল যে শিশু অনুকূলচন্দ্রই তার আরাধ্য দেবতা স্বয়ং গােপালদেব।

মায়ের প্রতি ভালোবাসা 

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ছােট্ট অনুকূলচন্দ্রের দুষ্টুমিও ক্রমে বাড়তে শুরু করল। একদিন তার দুরন্তপনার
জন্যে তার মা মনােমােহিনী দেবী একটি বাঁশের কঞ্চি নিয়ে অনুকূলচন্দ্রকে মারতে ছুটলেন। অনুকূলচন্দ্রও প্রাণপণে
দৌড়ােতে লাগল। কিছুক্ষণ পর, হঠাৎ পেছনে ফিরে অনুকূলচন্দ্র দেখতে পেল যে তার মা সমানে ঘামছেন আর
হাঁফাচ্ছেন। মার চোখ-মুখ লাল হয়ে গেছে। মায়ের এই অবস্থা দেখে অনুকূলচন্দ্রের ভীষণ কষ্ট হল। আর যাতে
মার কষ্ট না হয় সেজন্যে মার কাছে অবশেষে নিজেকে ধরা দিল অনুকূলচন্দ্র। মার কষ্ট যে সে কিছুতেই সহ্য
করতে পারে না!
আরেক দিনের ঘটনা। সেদিন
বালক অনুকূলচন্দ্রের স্কুলে যেতে
কান কারণে দেরি হয়ে যায়।
ঐদিনই ছিল তার অঙ্ক পরীক্ষা।
তার মা মনােমােহিনী দেবী
একটু রেগে অনুকূলচন্দ্রকে বলে
ফেললেন— “তুই এত দেরি করে
স্কুলে যাচ্ছি! দেখবি, তুই আজ
একটাও অঙ্ক করতে পারবি না।
মায়ের কথায় মন ভার হয়ে গেল
অনুকূলচন্দ্রের। স্কুলে গিয়ে প্রশ্নপত্র
হাতে নিয়ে দেখে, সে সব অঙ্কই
করতে পারবে। কিন্তু সেদিন শুধু
সাদাখাতা দিয়ে অনুকূলচন্দ্র বাড়ি
চলে এলাে। সাদাখাতা জমা দেওয়ার
সময়, মাষ্টারমশাই তার কারণ
জানতে চাওয়ায় , অনুকূলচন্দ্র
বলল—মাষ্টারমশাই, মা বলেছেন
যে আমি একটাও অঙ্ক করতে
পারব না। আমি অঙ্ক করলে যে মায়ের কথা মিথ্যে হয়ে যাবে। মায়ের কথা মিথ্যে হতে দিতে আমি কখনও
পারব না। পরে অনুকূলচন্দের জন্যে, নতুন করে অঙ্ক পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন শিক্ষকেরা এবং অনুকূলচন্দ্র তাতে
উত্তীর্ণ হন।
একসময় পরিবারের আর্থিক অনটনে মায়ের কষ্ট দেখে অনুকূলচন্দ্র মাকে বলেছিলেন—মা, তুই ভয় করিস
। তুই মুড়ি ভাজবি আর আমি বিক্রি করব। দেখিস তখন তাের কত টাকা হবে! অনুকূলচন্দ্র আরও বলতেন—মা
ছাড়া আমি অচল। কেবল ফাঁক খুঁজতাম কেমন করে মাকে খুশি করব।
নিজের জীবনে অনুকূলচন্দ্র মাকে এতটা ভালবাসতেন বলেই পরবর্তীকালে বলতে পেরেছিলেন—
‘মাতৃভক্তি অটুট যত,
সেই ছেলেই হয় কৃতি তত।”

ছোট বেলা

বালক অনুকূলচন্দ্র ছিলেন তার খেলার সাথীদের একান্ত আপনজন। বন্ধুরা তাকে আদর করে ‘রাজাভাই
বলে ডাকত। তাদের দুরন্তপনার জুড়ি মেলা ভার। একদিন দুপুরবেলায় বাড়ির সকলে যখন বিশ্রাম নিচ্ছেন,
তখন অনুকূলচন্দ্র তার খেলার সাথীদের নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ে। তারপর কায়দা করে মায়ের তালাবন্ধ
রান্নাঘরের বেড়ার ফাঁকে ফাপা পাটকাঠির নল ঢুকিয়ে দিলেন। এরপর বন্ধুরা একে একে দুধের পাত্র থেকে
সেই পাটকাঠির নল দিয়ে সব দুধ টেনে টেনে খেয়ে ফেলল।
বিশ্রামের পরে মা
দেখলেন যে দুধের ওপরের
সরটাই শুধু পড়ে আছে।
দুধ একফোটাও নেই।
ছেলের দুষ্টুমি আঁচ করে
তিনি যখন অনুকূলচন্দ্রকে
এর কারণ জিজ্ঞেস
করলেন, অনুকূলচন্দ্র তখন
অকপটে সব কথাই মাকে
=5
বলে ফেলল।
আরেকটি ঘটনা।
অনুকূলচন্দ্রের পাশের
বাড়িতে থাকতে ন
ইচছাময়ী। অনুকূলচন্দ্র
তাকে ভালাে মা’ বলে
ডাকত। ইচ্ছাময়ীও অনুকূলচন্দ্রকে খুব ভালবাসতেন। একদিন ইচ্ছাময়ী তাকে নিয়ে এলেন বাড়িতে। জ্যৈষ্ঠ মাসের
গরম। তিনি অনুকূলচন্দ্রকে ঘরে রেখে নদীতে স্নান করতে গেলেন। কিন্তু স্নান সেরে এসে অনুকূলকে না দেখতে
পেয়ে তাকে ডাকতে লাগলেন। কিন্তু কোন সাড়াই পেলেন না। শেষকালে রান্নাঘরে ঢুকেই তার চোখ পড়লাে
আমের ঝুড়ির দিকে। ঝুড়িভর্তি পাকা আম ছিল। এখন একটা আমও আর নেই। দুঃখে ইচ্ছামতী চুপ করে বসে
রইলেন। তার বাড়ির পাশেই থাকতেন নবকৃষ্ণ চৌধুরী। তিনি তামাক খেতে খেতে অনুকূলচন্দ্রের সব কীর্তিই
লক্ষ্য করেছিলেন। তিনি ইচ্ছাময়ীকে বলে দিলেন যে অনুকূলচন্দ্র দলবল নিয়ে সব আম নিয়ে চলে গেছে। আর
বলে কিনা—আমাদের না দিলে এমনি করেই খাব! এসব কথা শুনে ইচ্ছাময়ীর রাগ আরাে বেড়ে গেল। অনুকূলকে
একবার পেলে হয়! তাতে আর কি যায় আসে ওদের। এতােক্ষণে পাঁচু, দাক্ষায়নী, দেবেন, ভােলাকে নিয়ে
অনুকূলচন্দ্ৰ আমগুলি প্রায় শেষ করে এনেছে। কিপটে হলে এমনই হাল হয়।

মাছেদের মুক্তি

একদিন সকালবেলা বালক অনুকূলচন্দ্র দেখলেন যে কয়েকজন জেলে একটি বিলে জাল ফেলে মাছ ধরছে। জালে
আটকে থাকা মাছগুলিকে তারা নৌকোর মধ্যে রাখছে। নৌকোর মধ্যে অল্পজলে মাছগুলির প্রাণ যায় যায়! বাঁচার শেষ
চেষ্টায় তারা ছটফট করতে থাকে। অনুকূলচন্দ্র তা দেখে আর ঠিক থাকতে পারে না! জেলেদের কাছে গিয়ে সে
মাছগুলিকে ছেড়ে দেওয়ার জন্যে কাকুতি-মিনতি করতে থাকে। কিন্তু জেলেরা তাতে রাজি নয়। অনুকূলচন্দ্রের
নাছােড়বান্দা ভাব দেখে অবশেষে তারা বলে, দু’টাকা মূল্য পেলে তারা মাছগুলিকে জলে ছেড়ে দেবে। আশার আলাে
দেখতে পেয়ে অনুকূলচন্দ্র এক ছুটে মায়ের কাছে এসে সব ঘটনা বলল। মা অনুকূলচন্দ্রকে দু’টাকা দিলেন। সেই দু’টাকা
অনুকূলচন্দ্র এবার জেলেদের দিলে তারা মাছগুলিকে আবার জলে ছেড়ে দেয়। পরম নিশ্চিন্ত বােধ করে অনুকূলচন্দ্র।
মাছগুলি নতুন জীবন পেল। পরবর্তী সময়ে, অনুকূলচন্দ্র নিজের জীবনেও মাছ খাওয়া ছেড়েছিলেন মাছেদের যন্ত্রণা
দেখে! একবার তার সুহৃদ অনন্তনাথ রায়ের বাড়িতে নেমন্তন্ন খেতে গিয়ে দেখেন যে উঠোনে একটা চিতল মাছ মৃত্যু
যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। অনুকূলচন্দ্র ভাবলেন যে তিনি যদি চিতল মাছ হতেন আর এইভাবে যদি তাকে এনে উঠোনে
রাখত... কী কষ্ট! কী যন্ত্রণা !! এরপর থেকেই অনুকূলচন্দ্র মাছ খাওয়া ছেড়ে দিলেন।

একে একে দুই নয়

পাঁচ বছর বয়সে অনুকূলচন্দ্রের হাতেখড়ি হয়ে যায়। বাড়ির কাছে কাশীপুর হাটে, কৃষ্ণচন্দ্র বৈরাগীর পাঠশালাতেই
তার বিদ্যারম্ভ। ক্রমে অনুকূলচন্দ্র পাবনা ইষ্টিটিউশান, আমিরাবাদের রাইপুরা হাইস্কুল এবং তারপর নৈহাটীর
মহেন্দ্ৰ হাইস্কুলে পড়াশুনা করেন। মহেন্দ্র হাইস্কুল থেকেই তিনি প্রবেশিকা (এন্ট্রাস) পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন।
স্কুল জীবনের একটি ঘটনা। একদিন অঙ্কের ক্লাশে, মাষ্টারমশাই তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এক আর একে যােগ
করলে কত হয়। যােগের নিয়মে উত্তর দুই হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু অনুকূলচন্দ্র বলে ওঠে—“এক আর একে
দু’টো এক’ হয়। কিন্তু কখনাে দুই হয় না। শিক্ষক বেত দিয়ে তাকে খুব মারলেন। এত সােজা অঙ্কটা কেন
অনুকূল পারল না! বেতের আঘাতে নিদারুণ কষ্ট পেয়েও নিজের উত্তরে অনড় থাকল অনুকূলচন্দ্র। তার মতে,
দু’টো বস্তু অবিকল একরকম হলেই একমাত্র তখন তাদের যােগ সম্ভব! কিন্তু পৃথিবীতে কোনও দুটো বস্তুই যে
অবিকল সমান নয়। তাই এক আর একে যােগ দেওয়াই সম্ভব নয়, ফলাফল তাে দূরের কথা !

মুমূষু মানুষটিকে রক্ষা
স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। কিন্তু বাড়ি ফেরার উপায় নেই। বাইরে যে অঝােরে বৃষ্টি হয়ে চলেছে। কেউ স্কুল থেকে
বেরােতে পারছে না। অনুকূলচন্দ্রের মন কেমন যেন ছটফট করছে! আর ভাল্লাগছে না স্কুলে আটকে থাকতে। অবশেষে,
বালক বেরিয়ে পড়ল রাস্তায়। বাইরে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি। হাতের শ্লেটখানি মাথায় দিয়ে অনুকূলচন্দ্র চলতে লাগল। কাশীপুরের
রাস্তার পাশেই কতগুলি বাঁশঝাড়। সেই পথ দিয়েই হেঁটে চলেছে অনুকূলচন্দ্র। যেতে যেতে পথের পাশের একটি গভীর
গর্ত থেকে তার কানে ভেসে আসে করুণ আর্তনাদ ! হা আল্লা, হা আল্লা! এতাে মানুষের ডাক! অনুকূলচন্দ্রের বুঝতে
এতটুকু অসুবিধা হল না যে কেউ বিপদে পড়ে ভগবানকে ডাকছে।
অনুকূলচন্দ্র চকিতে সেই জলস্রোতের মধ্যে গর্তে আটকে পড়া বৃদ্ধ মানুষটির কাছে পৌঁছে গেলেন। নিজের ছােট্ট
চেহারা দিয়ে অতিকষ্টে সেই মুমূর্য অন্ধ মানুষটিকে গর্ত থেকে তুলে নিয়ে এলেন। তারপর সন্নিকটস্থ বাড়িতে নিয়ে
গিয়ে শুশ্রুষা করলেন। মৃতপ্রায় বৃদ্ধ মানুষটি সুস্থ হয়ে অনুকূলচন্দ্রকে মনেপ্রাণে অনেক কৃতজ্ঞতা জানাতে লাগলেন।
আর, বলতে লাগলেন বারে বারে, “তুমি আমার আল্লা! তুমিই আমার আল্লা!!

জিজ্ঞাসু মন

কোন একটি অজানা বিষয় সম্পূর্ণভাবে না বুঝলে অনুকূলচন্দ্রের কিছুতেই পরিতৃপ্তি হত না। সম্পূর্ণ জানা
পর্যন্ত সব সময় সে অস্থির হয়ে থাকত। বাগানে নানা রকমারি গাছ দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল সেদিন
অনুকূলচন্দ্র। একই মাটি অথচ সেই একই মাটি থেকে যখন নানান গাছ বেরিয়ে আসে, কেন তারা আলাদা
হয়? এই নিয়ে কেবল চিন্তা করে চলেছে বালক অনুকূলচন্দ্র। সমাধান না পেয়ে কেঁদেও ফেলে মাঝে মাঝে।
কিন্তু চিন্তা করা কখনাে ছাড়েনি। অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে একদিন বাগানে গিয়ে ছােট ছােট কিছু গাছ উপড়ে দেখতে
লাগল। সে দেখল যে,—একই মাটির থেকে গাছগুলির জন্ম হলেও শেকড়ের সাথে যে বীজগুলি লেগে রয়েছে
সেগুলি আলাদা আলাদা। পুরাে ব্যাপারটাই এবার জলের মতন পরিষ্কার হয়ে গেল তার কাছে। বীজগুলি আলাদা,
তাই গাছও আলাদা।
জিজ্ঞাসু মন না থাকলে জীবনে-জগতে অনেক কিছুই অজানা থেকে যায়। প্রগাঢ় অনিসন্ধিৎসু মনের অধিকারী
ছিলেন বালক অনুকূলচন্দ্র।

রসগােল্লার লােভ জয়

অনুকূলচন্দ্ৰ ছােটবেলায় রসগােল্লা খেতে ভীষণ ভালবাসতাে। রসগােল্লার প্রতি এমনই লােভ যে পয়সা না
থাকলেও ধারে ময়রার দোকান থেকে রসগােল্লা খেতাে অনুকূলচন্দ্র। এমনিভাবে দিন যায়। সময়মত টাকা না
পেলে দোকানী প্রায়ই অপমান করতেন বালক অনুকূলচন্দ্রকে। একদিন অনুকূলচন্দ্রের আত্মসম্মানে যথেষ্ট আঘাত
লাগায় কোনরকমে সে টাকা যােগাড় করে ধার শােধ করল। এবং মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল যে আর কোনদিন
সে রসগােল্লা খাবে না। যেমন করেই হােক, লােভকে জয় করতেই হবে। তারপর অনুকূলচন্দ্র একদিন বেড়াতে
বেরিয়েছিল বাজিতপুর ষ্টীমার ঘাটের দিকে। চারিদিকে ছােট ছােট ধান গাছ ও অড়হরের সবুজ-বিতান। কিছুদূর
যেতে না যেতেই দৃষ্টি পড়ল সেই রসগােল্লার দোকানের দিকে। কতদিন রসগােল্লা খায়নি! ভীষণ লােভ হল
রসগােল্লা দেখে। পকেটে হাত দিয়ে দেখল যে সাড়ে পাঁচ আনা পয়সাও আছে। কিন্তু পরক্ষণেই প্রতিজ্ঞার কথা।
মনে হতে হাতটা উঠে এল পকেট থেকে। তবুও রসগােল্লার লােভ যে কিছুতেই ছাড়ে না! কী করবে? কঠোর
প্রতিজ্ঞা এবং রসগােল্লার লােভ এই দু’টানই অস্থির করে তুললাে অনুকূলচন্দ্রকে। মনে মনে অনুকূলচন্দ্র ভাবল—যেমন
করেই হােক এই লােভকে জয় করতেই হবে। সামনে ছিল অড়হর (ডালের) ক্ষেত। তারমধ্যে শুয়ে দু’হাতে
শক্ত করে কয়েকটা অড়হরের গাছ ধরে মনে মনে যেন বলতে লাগল—দেখি! লােভ কীভাবে আমাকে ময়রার
দোকানে নিয়ে যায় !! এমনিভাবে কিছুক্ষণ শুয়ে মন সংযত করে ধীরে ধীরে উঠে পড়লাে। পরের দিনগুলিতে,
এইভাবেই মনটাকে অন্য কাজে ঘুরিয়ে দিয়ে (কখনাে বা কারুর সাথে মিছিমিছি ঝগড়া জুড়ে) অনুকূলচন্দ্ৰ ক্ৰমে
রসগােল্লার লােভকে জয় করে ফেলল।

নিজেকে হীন না ভাবা

অনুকূলচন্দ্রের বাড়িতে এলেন দু’জন
বৈষ্ণব। তাদের গায়ে নামাবলি, কপালে
চন্দন, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। অনুকূলচন্দ্রকে
তারা বললেন—গোঁসাই-এর ইচ্ছায় তারা
“তার”-ই নগণ্য দাসমাত্র। অনুকূলচন্দ্র
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বৈষ্ণবদ্বয় কে
বললেন—আমার মনে হয় যে আমি
পরমপিতার সন্তান। বৈষ্ণবদ্বয় অনুকূলচন্দ্রের
মুখ থেকে এই কথা শুনে বললেন, এসব
অহঙ্কারের কথা বলতে নেই। বরং দীনভাবে
সবসময় বলবে,—আমি দুর্বল, আমি পাপী,
অসহায়, অধম, অপবিত্র, নীচ। আমাকে রক্ষা
কর, ত্রাণ কর দয়াময়। অনুকূলচন্দ্র সেই
কথামত কিছুদিন মনে মনে এইভাবে ভাবতে
লাগল। কিন্তু এইভাবে ভাবতে ভাবতে
ক্রমশঃ সে মানসিক যন্ত্রণা অনুভব করতে
লাগল। তারপর একদিন পদ্মানদীর ধারে
গিয়ে দিগন্তের পানে চেয়ে সমস্ত দীনভাব
ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে চিৎকার করে বলতে
লাগল,আমি পাপী নই, হীন নই, দীন
নই, আমি পরমপিতার সন্তান। আমি
শক্তিমান। এইভাবে বলতে বলতে অনুকূলচন্দ্র
অনুভব করল যে মনের কষ্টটা যেন তার
লাঘব হল। এবং বুঝল যে নিজেকে হীন
ভাবলে ক্রমশঃ দুর্বল হয়ে যেতে হয়।
একদিন সকালে সবুজ ঘাসের ওপর এক
বিন্দু শিশিরের মধ্যে সূর্যের প্রতিফলন দেখে
বালক অনুকূলচন্দ্র ভাবল যে, ছােট্ট শিশিরবিন্দু
যদি বিরাট সূর্যকে আপন বক্ষে ধারণ করে
প্রতিফলিত করতে পারে, আমিই বা পারব
কেন ঈশ্বরকে আমার মধ্যে প্রকাশ করতে?

বন্ধুর প্রতি ভালবাসা

ছােটবেলা থেকেই অনুকূলচন্দ্রের
বন্ধুপ্রীতির বহু পরিচয় পাওয়া যায়।
নৈহাটী মহেন্দ্র হাইস্কুল থেকে
অনুকূলচন্দ্র প্রবেশিকা পরীক্ষা
দেওয়ার জন্যে প্রস্তুত হতে থাকেন।
পিতা শিবচন্দ্র চক্রবর্তী পরীক্ষার
‘ফি’ জমা দেওয়ার জন্যে প্রয়ােজনীয়
অর্থও পাঠিয়ে দেন অনুকূলচন্দ্রকে।
কিন্তু পরীক্ষার ফি জমা দিতে
গিয়ে অনুকূলচন্দ্র দেখেন যে—তাঁরই
এক সহপাঠী অর্থাভাবে ফি জমা
দিতে না পেরে বিমর্ষ মনে এক
জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। বন্ধুটি খুবই
পেরে সে হতাশ। বন্ধুর মন খারাপ
দেখে অনুকূলচন্দ্রের ভীষণ কষ্ট
হল। নিজের কথা না ভেবে বাবার
পাঠানাে নিজের ‘ফি’-এর টাকা
অনুকূলচন্দ্র ঐ সহপাঠী বন্ধুকে দিয়ে
দিলেন। অনুকূলচন্দ্রের নিজের আর
প্রবেশিকা পরীক্ষা দেওয়া হল না!
শুধু তাই নয়। নৈহাটীতে
থাকাকালীন, ছাত্রাবস্থাতেই
অনুকূলচন্দ্র গরীব-দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের
সাহায্য করার জন্যে একটি ফান্ড
তৈরি করেছিলেন। মহৎ হৃদয়প্রাণ
শ্রীপরমেশচন্দ্র চক্রবর্তী এই কাজে
অনুকূলচন্দ্রকে অনেক সাহায্য
করেছিলেন।

কোলকাতায় ডাক্তারি পড়া

এবার অনুকূলচন্দ্র কোলকাতায় ন্যাশন্যাল মেডিকেল স্কুলে ভর্তি হন। নৈহাটির পাট চুকিয়ে এবার শহর
কোলকাতায় থাকা। উত্তর কোলকাতার গ্রে স্ট্রীটের একটি কয়লার গুদামের ছােট্ট ঘরে তার থাকার ব্যবস্থা হল।
পিতা শিবচন্দ্র প্রতিমাসে তারই বন্ধ মারফৎ ১০ টাকা করে তাকে পাঠানাের ব্যবস্থা করেন। কয়েক মাস পরে,
যে কোন কারণেই হােক, সেই টাকা আসাও বন্ধ হয়ে গেল। এর ফলে, অনুকূলচন্দ্রকে কোলকাতা শহরে নিদারুণ
অসুবিধায় পড়তে হয়। বহুদিন তাকে অনাহারে-অর্ধাহারে, এমনকি শুধু কলের জল খেয়েও রাত কাটাতে হয়েছে।
সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম। প্রতিদিন তাকে প্রায় দশ-বারাে মাইল হেঁটে মেডিক্যাল স্কুলে যেতে হত। গ্রে স্ট্রীটে
হেমন্তকুমার চট্টোপাধ্যায়ের “লাহিড়ী কোম্পানি” নামে একটি ওষুধের দোকান ছিল। হেমন্তবাবু অনুকূলচন্দ্রের
সততা ও ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে, তার দুরবস্থার নিরাকরণে তাকে এক বাক্স হোমিওপ্যাথি ওষুধ এবং “পারিবারিক
চিকিৎসা” নামে একটি বই দেন। এই দুই প্রীতির অবদান অনুকূলচন্দ্রের জীবনের দুর্দিনে সাহারা হয়ে দেখা দিল।
এই বই পড়ে, স্থানীয় রােগীদের চিকিৎসা করতে শুরু করলেন অনুকূলচন্দ্র। কয়লা গুদামের কুলীদের চিকিৎসা
করে অল্পদিনের মধ্যেই তিনি তাদের ভরসাস্থল হয়ে উঠলেন। শুধু তাই নয়, গরীব রুগীদের অর্থ-ওষুধ-পথ্য
দিয়েও যথাসাধ্য সেবা করে তিনি তাদের সুস্থ করে তুলতেন। কোলকাতা থেকে হিমাইতপুর আসার সময় কয়লার
গুদামের কুলীরা সদলবলে এসে অনুকূলচন্দ্রকে তার মালপত্রসহ ট্রেনে তুলে দিত।
কোলকাতায় ডাক্তারি পড়ার পাট চুকিয়ে নিজের গ্রামে হিমাইতপুর চলে এলেন অনুকূলচন্দ্র।

গ্রামে এসে ডাক্তারি

১৯১০ সালে, অনুকূলচন্দ্র নিজ-গ্রাম হিমাইতপুরে ফিরে আসেন কোলকাতা থেকে। ইতিমধ্যে ঠাকুর এস্টেটের
(কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বংশের জমিদারী) দপ্তর থেকে মাসিক পঞ্চাশ টাকার মায়নার লােভনীয় চাকরির
নিয়ােগপত্র পান অনুকূলচন্দ্র। কিন্তু স্বাধীনভাবে উপার্জনে বিশ্বাসী অনুকূলচন্দ্র সেই চাকরিতে যােগ দিলেন না।
তারপরে নিজের গ্রামেই একটি ডিপোরি তৈরি করে গ্রামের মানুষদের চিকিৎসা করতে আরম্ভ করলেন
অনুকূলচন্দ্র। তিনি গ্রামবাসীদের কাছে তার সুচিকিৎসার গুণে কিছুদিনের মধ্যেই “ধন্বন্তরী” চিকিৎসক হিসেবে
পরিচিত হলেন। রােগীরা তার আপনজন। কারাে চিকিৎসার দায়িত্ব একবার নিলে, সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত
কিছুতেই নিশ্চিন্ত হতে পারেন
অনুকূলচন্দ্র। কেউ অর্থাভাবে
ওষুধপত্র না কিনতে পারলে
নিজেই তা কিনে রােগীর বাড়িতে
পৌঁছে দিতেন। রােগীদের প্রতি ।
তার মমত্ববােধ এতই গভীর
ছিল যে, চিকিৎসার ব্যাপারে
অভিভাবকদের কোনরকম
উদাসীনতা মােটেই তিনি
বরদাস্ত করতে পারতেন না।
অনুকূলচন্দ্রের রােগনির্ণয়ের
অত্যাশ্চর্য ক্ষমতা ও সেইমত
উপযুক্ত ওষুধের নির্বাচনে আকৃষ্ট
হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে রােগীরা
ভিড় করতে থাকে হিমাইতপুরে
অনুকূলচন্দ্রের মনন এমনই
পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছিল যে
রােগী দেখলেই ওষুধের নাম
তার মনে ভেসে উঠত।
তিনি যে বিশেষ কোন একটি চিকিৎসা পদ্ধতির (হোমিওপ্যাথি, অ্যালােপ্যাথি বা আয়ুর্বেদ) ওপর নির্ভর
করে চিকিৎসা করতেন তা নয়, অসুখ সারাতে সবরকম পদ্ধতিই ছিল তার হাতিয়ার। যখন যেটা দরকার। রােগীর
আরােগ্যই আসল কথা।

মনের চিকিৎসা

অনুকূলচন্দ্র রােগীদের চিকিৎসা করতেন প্রাণভরা দরদ দিয়ে। রােগীরা তাকে মনের কথা খুলে বলতেন।
এইভাবে চিকিৎসা করতে করতে আর গ্রামের মানুষদের সাথে মিশে অনুকূলচন্দ্রের মনে ক্রমে যে ধারণাটা বদ্ধ
হয়ে উঠল, তা হল, মানুষের আসল রােগ হল মনে। তাই আগে চাই, মানুষের মনের পরিবর্তন ও সুস্থতা।
ডাক্তারির সাথে সাথে গ্রামের তথাকথিত অপাংক্তেয় মানুষদের (চোর, নেশাগ্রস্থ বা দুশ্চরিত্র) সাথে মিশে, তাদের
সৎচলনে উদ্বুদ্ধ করে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে লাগলেন অনুকূলচন্দ্র। মানুষের মনে অসৎ চিন্তাকে ঘুরিয়ে
দেওয়ার জন্যে গ্রামেই কীর্তনদল তৈরি করলেন অনুকূলচন্দ্র। এজন্যে খােল, করতাল যােগাড় করে কীর্তনের
উপযােগী নতুন নতুন গান রচনাও করতে লাগলেন তিনি। সঙ্গীদের নিয়ে রাতদিন তুমুল কীর্তন চলতে লাগল।
সবার মনে আনন্দের জোয়ার বইতে লাগল। বহু দুবৃত্তের চরিত্র সংশােধন হল। মানুষের অপরাধ করার ঝোক
কমে যেতে লাগল। ক্রমে শরীরের চিকিৎসা ছেড়ে এইভাবে মানুষের মনের চিকিৎসক হয়ে উঠলেন অনুকূলচন্দ্র।

সত্যানুসরণ রচনা

পাবনার বাজিতপুর স্টীমার-ঘাটের স্টেশন মাস্টার অতুলচন্দ্র ভট্টাচাৰ্য্য ছিলেন অনুকূলচন্দ্রের ভক্ত। তিনি
কর্মসূত্রে বদলি হয়ে চলে যাবেন অন্যস্থানে। প্রিয়পরম অনুকূলচন্দ্রের সান্নিধ্যে আর যে তার থাকা হবে না! তাই
তিনি অনুকূলচন্দ্রের কাছে, জীবনপথে কীভাবে চলতে হবে, সেই পথনির্দেশিকা প্রার্থনা করলেন।
অনুকূলচন্দ্রের বয়স তখন মাত্র ২২ বছর। ভক্তের এই আকুল প্রার্থনায় এক রাতে অনুকূলচন্দ্র লিখে দিলেন
অমৃত-নির্দেশের পাণ্ডুলিপি।,তাই-ই পরবর্তীকালে প্রকাশিত হয় “সত্যানুসরণ” গ্রন্থ হিসেবে যা “গীতা”, “বাইবেল,
“কোরাণ”, “কথামৃত”-র সমতুল। এই “সত্যানুসরণ” আমাদের সবার কাছে মহাপবিত্র। পরবর্তীসময়ে, কথনের
মাধ্যমে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র হাজার হাজার গদ্যে-পদ্যে বাণী দিলেও একমাত্র “সত্যানুসরণ” গ্রন্থটিই তার নিজের
হাতে লেখা। সেই “সত্যানুসরণ” গ্রন্থের একটি বাণী হল—“তুমি যদি এমন শক্তি লাভ করে থাক, যাতে
চন্দ্র-সূর্য কক্ষচ্যুত করতে পার, পৃথিবী ভেঙ্গে টুকরাে-টুকরাে করতে পার বা সব্বাইকে ঐশ্বৰ্য্যশালী করে দিতে
পার, আর যদি হৃদয়ে প্রেম না থাকে, তবে তােমার কিছুই হয়নি। ...যতদিন তােমার শরীর ও মনে ব্যথা লাগে,
ততদিন তুমি একটি পিপীলিকারও ব্যথা নিরাকরণের দিকে চেষ্টা রেখাে, আর তা যদি না কর, তবে তােমার
চাইতে হীন আর কে?”

কীর্তনযুগ ও পুণ্যপুঁথি

অনুকূলচন্দ যে কীর্তনদল তৈরি করেছিলেন, সেই দলের অন্যতম ছিলেন কিশােরীমােহন, অনন্তনাথ, সতীশচন্দ্র।
কাতারে কাতারে মানুষ সব ভুলে মেতে উঠল কীর্তনে। কীর্তন চলাকালে নৃত্যরত অনুকূলচন্দ্রের দিব্য সুন্দর
অপূর্ব ভঙ্গিমা ধরাধামে স্বগীয় পরিবেশের সৃষ্টি করত। কীর্তনের চরম অবস্থায় নাচতে নাচতে অনুকূলচন্দ্র অনেক
সময় অচৈতন্য হয়ে মাটিতে পড়ে যেতেন। তখন তার দিব্যদেহে প্রাণের চিহ্নমাত্রও থাকত না। সন্দেহকারীরা
তা পরীক্ষা করার জন্যে, নিদারুণভাবে তার দেহে জ্বলন্ত কয়লা চেপে ধরত অথবা আঙ্গুলের নখ ও চামড়ার
মাঝখানে আলপিন ঢুকিয়ে দিত। এতেও তার দেহে বিন্দুমাত্র সাড়া পাওয়া যেত না। ঐ অবস্থায় তার শ্রীমুখ
দিয়ে নানান ভাষায় অনর্গল বাণী নিঃসৃত হত। কিছুদিন পরে, ঘটনার অসীম গুরুত্ব বুঝে, সেই বাণীগুলি লিখে
রাখার ব্যবস্থা করা হয়। পরে সেই সব বাণীগুলিকে একত্রিত করে যে বইটি প্রকাশিত হয়, তার নাম “পুণ্যপুঁথি”।
ঠাকুরের জীবনের এই কীর্তনযুগের সময়কাল ১৯১৪ থেকে ১৯১৯।
কীর্তন মানুষের মনে সাময়িক পরিবর্তন আনলেও মানুষের খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের মত দৈনন্দিন প্রয়ােজনগুলিকে
পূরণ করতে পারে না। কীর্তনযুগের এই প্রবল উৎসাহকে সঠিকভাবে কাজে লাগানাের জন্যে অনুকূলচন্দ্র এবার
জোর দিলেন কর্মোদ্যোগে। তার সাথে সাথে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে লাগলেন আদর্শকেন্দ্রিক চলনে।

ঠাকুরের ছাগশিশু উদ্ধার

একবার হিমাইতপুর গ্রামে একজন তান্ত্রিক সাধক এসে উপস্থিত হলেন। তিনি শ্মশানের কাছেই একটি জায়গায়
থাকতে লাগলেন। একদিন তিনি শ্মশানে পুজো করবেন বলে মনস্থির করলেন এবং সেই পুজোতে একটি ছাগশিশু
বলি দেবেন বলে ঠিক করলেন। অনুকূলচন্দ্র সেই সংবাদ শুনে অস্থির হয়ে উঠলেন। অনুকূলচন্দ্র থাকতে না পেরে
নিজেই শ্মশানে উপস্থিত হয়ে ঐ ছাগশিশুকে বলি না দিতে তান্ত্রিককে অনেক অনুরােধ করলেন। তার বিনিময়ে যে
কোন মূল্যও দিতে চাইলেন অনুকূলচন্দ্র। কিন্তু তান্ত্রিক কোনমতেই রাজি হলেন না। বলি তিনি দেবেনই। অনুকূলচন্দ্রের
মা মনােমােহিনী দেবী এসব ঘটনা শুনে কাউকে শ্মশানঘাটে যেতে বারণ করলেন এবং ছাগশিশুকে বলি দেওয়ার
ব্যাপারে কেউ যেন কিছু না বলে সেই নির্দেশ দিলেন। কিন্তু অনুকূলচন্দ্র ঐ ছাগশিশুটিকে উদ্ধার করতে নাছােড়বান্দা।
অথচ মায়ের কথাও লঙ্ঘন করা যাবে না।
এই মহাসংকটে ভক্ত নফরচন্দ্র এসে মাতা মনােমােহিনী দেবীকে আশ্বস্ত করে বললেন যে তিনি নিজে গিয়ে
ছাগশিশুটিকে উদ্ধার করে আনবেন। কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই। এবার মা সম্মতি জানালেন। নফরচন্দ্র এরপর
শ্মশানে গিয়ে পূজাস্থল থেকে এক লাফে ঐ ছাগশিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে নিমেষে দৌড়ে পালিয়ে এলেন।
এমন আচমকা কাণ্ডে তান্ত্রিকের দল থতমত খেয়ে কিছুই করতে পারল না। পরম স্বস্তি পেলেন অনুকূলচন্দ্র।

অনন্তনাথকে জীবন দান

অনুকূলচন্দ্রের বাল্য-সহচর ও পরমভক্ত
ছিলেন অনন্তনাথ। তিনি নিজের জীবনে বাবা-
মা স্ত্রী ছেলেকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন।
জীবনের আর কোন মূল্যই নেই তার কাছে।
যদি না ভগবানকে পাওয়া যায়। এই সবই
তিনি দিনরাত ভাবেন আর ভগবানকে ডেকে
চলেন। ক্রমাগত ভগবানকে ডেকেও তার দেখা
পেয়ে, একদিন তিনি স্থির করলেন, যদি
এবার তিনি ভগবানের দেখা না পান তবে এ
জীবন আর রাখবেন না। তাতেও ব্যর্থ মনােরথ
হলেন অনন্তনাথ। তাই এবার গলায় ফাসি
দিয়ে আত্মহত্যার প্রস্তুতি নিতে থাকেন তিনি।
সেদিন অঝােরে বৃষ্টি পড়ছে। অনন্তনাথ
তার ঘরের দরজাটি ভালাে করে বন্ধ করে
দিলেন। অনুকূলচন্দ্র তখন তার ডিপেনসারিতে
বিকেলবেলা বসে রােগী দেখছিলেন। হঠাৎ কী
মনে হওয়াতে রােগী দেখা বন্ধ করে ঝড়বৃষ্টির
মধ্যে তিনি ছুটলেন অনন্তনাথের বাড়ি। তার
কুটীরের সামনে এসে দেখেন দরজা বন্ধ।
অনুকূলচন্দ্র প্রাণপণে চিৎকার করে ডাকতে
থাকেন তাকে। কেউ আর দরজা খােলে না।
অনুকূলচন্দ্র আর থাকতে না পেরে ধাক্কা দিয়ে
দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরে ঢুকে দেখেন
অনন্তনাথ গলায় দড়ি দিতে উদ্যত। তড়িৎবেগে
অনুকূলচন্দ্র তাকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা
করেন। অনন্তনাথের বিস্ময়ের অবধি রইল
। অনন্তনাথ ভগবানকেই ডাকছিলেন আর
অনুকূলচন্দ্র তাকে এসে উদ্ধার করলেন !
অনন্তনাথের বুঝতে আর একটুও দেরি হল
না যে অনুকূলচন্দ্রই তার ভগবান।

কিশােরীমােহনের পরীক্ষা

অনুকূলচন্দ্রের আরেক লীলা-সহচর ছিলেন কিশােরীমােহন দাস। বারে বারে তিনি অনুকূলচন্দ্রকে নানান পরীক্ষা
করে তবেই তাকে ভগবান বলে গ্রহণ করেছেন। একদিন রাত্তিরবেলা, অনুকূলচন্দ্রকে সঙ্গে নিয়ে পদ্মাপারের রাস্তা
দিয়ে তিনি হেঁটে যাচ্ছিলেন। কিশােরীমােহন মনে মনে ভাবছিলেন, অনুকূলচন্দ্র যদি সত্যিই ভগবান হন, তাহলে
আমি যা’ মনে মনে ভাবছি তিনি তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন! এখন যদি অনুকূলচন্দ্র পদ্মায় নেমে ডুব দিয়ে
স্নান করে আসেন তবেই আমি তাকে ভগবান বলে বিশ্বাস করবাে। কিছু সময় পরেই অনুকূলচন্দ্র হাঁটা থামিয়ে
বলে উঠলেন, দাঁড়াও! মনে হচ্ছে গু মারিয়েছি। পদ্মায় একটা ডুব দিয়ে আসি। যেই বলা, সেই কাজ। পদ্মায়
ডুব দিয়ে স্নান করে এলেন অনুকূলচন্দ্র। কিশােরীমােহনের সন্দেহ তবু যায় না। ভাবলেন, হতেও তাে পারে!
রাস্তার ময়লায় পা পড়তেই পারে। তবে, আরেকবার যদি তিনি স্নান করে আসেন তবেই আমি সম্পূর্ণভাবে
বিশ্বাস করব যে অনুকূলচন্দ্র সত্যিই ভগবান। দু’জনে আবার হাঁটতে লাগলেন। বাড়ি পৌঁছেই অনুকূলচন্দ্র স্নানঘাটের
দিকে যেতে যেতে কিশােরীমােহনকে বললেন—শরীরের ময়লা ধুলেই যায় কিন্তু মনের ময়লা ধুলেও যায় না।
এই বলে পদ্মায় নেমে আবার স্নান করে এলেন। কিশােরীমােহন হতবাক! এ কী করে সম্ভব? কিশােরীমােহনের
মনে আর কোনাে সন্দেহের অবকাশই রইল না। মনে-প্রাণে বিশ্বাস করলেন, অনুকূলচন্দ্রই তার ভগবান।

ঘােড়ার পিঠে চাবুকের ঘায়ে তার পিঠে দাগ

একবার অনুকূলচন্দ্র ঘােড়ার
গাড়ি চড়ে কুষ্টিয়া থেকে বারাদি
যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন গােকুল
মণ্ডল, বীরু রায়, সতীশচন্দ্র
জোয়াদ্দার-সহ আরাে অনেকে।
গাড়ি চলতে শুরু করল। গাড়ি
যাতে তাড়াতাড়ি চলে, সেজন্যে
গাড়ির চালক ঘােড়াটির পিঠে
সজোরে সপাং-সপাং করে চাবুকের
আঘাত করতে লাগল। ঠাকুর
অনুকূলচন্দ্র গাড়ির মধ্যে তখন
আর্তনাদ করে উঠতে লাগলেন।
চাবুকের ঘা যেন তারই পিঠে
পড়ছে! তিনি গাড়িতে আর থাকতে
না পেরে মাঝপথেই নেমে পড়লেন।
গাড়িটিকে বিদায় দিয়ে তিনি হেঁটেই
গন্তব্যস্থানে পৌঁছােলেন। সেখানে।
গিয়ে যখন স্নানের জন্যে ঠাকুর
জামা খুললেন, তখন সবার নজরে
পড়ল যে অনুকূলচন্দ্রের পিঠে সেই
চাবুকের আঘাত-চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে
ফুটে উঠেছে। এ কী করে সম্ভব?
ঘােড়ার পিঠের চাবুকের আঘাতের
চিহ্ন ঠাকুরের পিঠে ফুটে উঠল
কীভাবে? অন্যের ব্যথা নিজের
ব্যথা বলে মনে-প্রাণে অনুভব
করলেই তাে এমন হতে পারে!
কেউ যে তার পর নয় !!
এই জগৎ-সংসারে গাছপালা
থেকে পশুপক্ষী, সবাই যে তার
আপনার!

বিশ্বগুরু উৎসব

কীর্তনযুগ থেকেই ক্রমে অনুকূলচন্দ্রকে ঘিরে তার অনুগামীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করল। অনুকূলচন্দ্রের ইচ্ছায়
তার ভক্তেরা শ্রীরামচন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণ, বুদ্ধদেব, যীশুখ্রীষ্ট, হজরত মহম্মদ, শ্রীচৈতন্য এবং শ্রীরামকৃষ্ণদেবের জন্মােৎসব
বিপুল উৎসাহে পালন করতে লাগলেন। কিন্তু আরেকটি কথাও তাদের মনে এলাে যে পূর্বতন মহাপুরুষদের
জন্মােৎসবের সাথে বর্তমান মহামানবেরও তাে জন্মােৎসব পালন করা উচিত। তাই তারা সমবেত হয়ে ঠিক
করলেন যে কুষ্টিয়াতে তাদের প্রাণের ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জন্মােৎসব পালন করবেন। এবং আরাে ঠিক করলেন
যে এই উৎসবে অনুকূলচন্দ্রকে বিশ্বগুরু' বলে ঘােষণা এবং প্রচার করবেন। সেটা ছিল ১৯১৮ সাল। অনুকূলচন্দ্রের
বয়স হবে ৩০। কিন্তু অনুকূলচন্দ্র এই প্রস্তাবে কিছুতেই রাজি হলেন না। তিনি সবাইকে ডেকে বললেন যে তার
জন্মােৎসব না করে বাঁচা-বাড়ার উৎসব করতে। অনুকূলচন্দ্রের জীবনের মূল কথাই যে বাঁচা-বাড়া। আর তা-ই
তাঁর কাছে ধর্ম। কিন্তু ভক্তেরাও নাছােড়বান্দা। তারা প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছেন অনেকখানি। পদ্মাপারের এপারে
পাবনা, ওপারে কুষ্টিয়া। সেখানেই উৎসব হবে বলে ঠিক। ভক্তেরা হতাশ হয়ে অবশেষে মাতা মনােমােহিনী
দেবীকে অনুরােধ করলেন যাতে অনুকূলচন্দ্র এই উৎসবে যান। ভক্তেরা খুব ভালাে করেই জানতেন যে মা একবার
“হ্যা” করলে অনুকূলচন্দ্র তা পালন করবেনই। উৎসবের বিশাল প্রস্তুতি দেখে আর ভক্তকুলের আর্জিতে
অনুকূলচন্দ্রের মা তাকে নিয়ে কুষ্টিয়া যাবেন বলে সম্মতি জানালেন। মা-র কথায় অনুকূলচন্দ্র রাজি না হয়ে
পারলেন না। কুষ্টিয়ার লঞ্চঘাটে উপস্থিত হয়ে বিশাল জনসমাগম দেখে, অনুকূলচন্দ্র নিজেই গড় হয়ে সবাইকে
প্রণাম করলেন। দু’দিনের এই উৎসবে হাজার-হাজার মানুষের আগমনে ঘােষিত হল যুগপুরুষােত্তমের আবির্ভাব।
কোলকাতা থেকেও বহু বিদগ্ধ মানুষ এই উৎসবে যােগদান করেছিলেন। তাঁদের অনেকেই অনুকূলচন্দ্রকে গুরুপদে
বরণ করলেন। অনুকূলচন্দ্র হলেন সকলের প্রাণের “ঠাকুর”।

কোলকাতায় প্রচার

বিশ্বগুরু আবির্ভাব (১৯১৮) মহােৎসবের প্রাক্কালে ঠাকুরের অনুগামী ভক্তেরা শুধু কুষ্টিয়া-পাবনা নয়,
কোলকাতাতেও ঐ উৎসবের বিপুল প্রচার করেছিলেন। সেই সূত্র ধরে কোলকাতা থেকে সুলেখক শাক্যসিংহ
সেনসহ আরও অনেকে কৌতূহলী হয়ে কুষ্টিয়া চলে আসেন। ঠাকুরের ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে শাক্যসিংহ সেন তাঁর
শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং তারপরেই তার পিতা, সুপ্রসিদ্ধ ব্যরিষ্টার চন্দ্রশেখর সেন উৎসবের বিবরণ এবং ঠাকুরের
মাহাত্ম্যের কথা শুনে তাকে দর্শন করার জন্যে হিমাইতপুরে আসেন। ঠাকুরের সাথে আলাপ-আলােচনায় মুগ্ধ
হয়ে তিনিও সনাম গ্রহণ করেন। আশ্রম থেকে আসার সময় তিনি অনুকূলচন্দ্রকে একবার তার কোলকাতার
বাড়িতে পদার্পণের জন্যে বিশেষ অনুরােধ জানান। ঠাকুর সেই অনুরােধ রক্ষা করতে কোলকাতায় কারবালা
ট্যাঙ্ক লেনে চন্দ্রশেখর সেন মহাশয়ের বাড়িতে আসেন। ওখানে চন্দ্রশেখর সেনের বন্ধুবান্ধব, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা,
আত্মীয়-স্বজনসহ বহু মানুষ অনুকূলচন্দ্রকে দর্শনের জন্যে আসতেন এবং শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, দর্শন, ধর্ম, সমাজ,
বিজ্ঞান ইত্যাদি নানান বিষয়ে ঠাকুরের সাথে আলােচনা করতেন। ঠাকুরের প্রেরণাদীপ্ত কথা শােনার জন্যে সেন
মহাশয়ের বাড়িতে ভিড় বেড়েই চলল। এঁদের অনেকেই ঠাকুরকে গুরু হিসাবে গ্রহণ করলেন। এইভাবে কোলকাতায়
যাওয়া-আসাও ঠাকুরের বাড়তে থাকল। ক্রমে জানকীনাথ বসু ও প্রভাবতী দেবী (নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর বাবা-
মা), ব্যারিষ্টার জে, এন, দত্ত, শশীভূষণ মিত্র, সুরেশচন্দ্র মুখার্জি, ব্যারিষ্টার সতীশচন্দ্র বসু (নেতাজী সুভাষচন্দ্র
বসুর দাদা), কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য্য (নােবেলজয়ী বিজ্ঞানী সি. ভি. রমনের সহযােগী) সহ আরাে অনেকে ঠাকুরকে
গুরুপদে বরণ করে নিলেন।

পুরীধামে

নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর বাবা
জানকীনাথ বসু এবং মা প্রভাবতী
দেবী দু’জনেই ছিলেন ঠাকুর
অনুকূলচন্দ্রের অনুগত ভক্ত। ওঁদের
একান্ত অনুরােধে, ১৯২৩ সালে ঠাকুর
অনুকূলচন্দ্র পরিবার ও ভক্তবৃন্দসহ
পুরীধামে গিয়ে প্রায় দেড় মাস অবস্থান
করেন। পুরীধাম বা নীলাচলে,
সমুদ্রতীরে, জানকীনাথ বসুর নিজস্ব
বাড়ি “হরনাথ লজে” ঠাকুরের থাকার
ব্যবস্থা হয়।
বসু-পরিবারের আতিথ্যে পুরীতে
থাকাকালীন প্রতিদিনই ভক্তেরা কীর্তন
করতে করতে নগর পরিক্রমায় বের
হতেন। তুমুল কীর্তনে পুরীধাম মুখরিত
হয়ে উঠল। নীলাচল নগরবাসী আনন্দে
মাতােয়ারা। জগন্নাথদেবের মন্দিরেও
ভক্তেরা দীর্ঘসময় ধরে কীর্তন করতেন।
ঠাকুর ও ভক্তবৃন্দের এই নগরকীর্তন
পুরীধামে মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের
কীর্তনের মহিমার কথা স্মরণ করায়।
বহু উৎকলবাসী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের
প্রেম ও ভালবাসায় উদ্দীপ্ত হয়ে
উঠলেন। পুরী থেকে ফেরার পর
মাতা মনােমােহিনী দেবী হিমাইতপুর
আশ্রমের সাধারণ ভােজনাগারের নাম
রাখেন “আনন্দবাজার”। এই
‘আনন্দবাজার’ নামটি পুরীর
জগন্নাথদেবের মহাপ্রসাদ বিতরণ-
স্থলের নামেই রেখেছিলেন স্বয়ং মাতা
মনােমােহিনী দেবী।

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের ঠাকুর-দর্শন

ঋষি শ্রীঅরবিন্দের ছােট ভাই বারীন্দ্রনাথ ঘােষের কাছে পাবনা সৎসঙ্গ আশ্রমের কথা শুনে ঠাকুরের সাথে সাক্ষাৎ
করার জন্যে আগ্রহী হয়ে ওঠেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। অবশেষে, ১৯২৪ সালে কোলকাতার মানিকতলায় এক সন্ধ্যায়
তিনি ঠাকুর-দর্শনে আসেন। সেদিনই বিশদভাবে নানান বিষয়ে ঠাকুরের সাথে আলাপ-আলােচনার পরে তিনি ঠাকুরকে
গুরুপদে গ্রহণ করেন। পরে তিনি বলেছিলেন—অসংখ্য বাধাবিঘ্ন আর সমস্যার মধ্যে যখন আমি ঠাকুরের কাছে এলাম,
তিনি মুহুৰ্ত্তমাত্র চিন্তা না করে কয়েকটি কথায় আমার সব সমস্যার সমাধান করে দিলেন। তার শিশুসুলভ সারল্য
আমাকে মুগ্ধ করেছিল। সেদিনটি ছিল ১৪ই মে, ১৯২৪ সাল।
প্রথম সেই ঐতিহাসিক সাক্ষাৎকারে ঠাকুর চিত্তরঞ্জনকে বলেছিলেন—জীবনে চাই আদর্শ বা গুরু। যেমন, অর্জুনের
গুরু ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ, শিবাজীর রামদাস স্বামী আর চন্দ্রগুপ্তের চাণক্য। আর খুব নামধ্যান করতে হবে। তাতেই শক্তি
পাওয়া যাবে। সেই শক্তি দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করা যাবে।
তারপর, ১৯২৫ সালের মে মাসে পাবনা সৎসঙ্গ আশ্রমে এসে কয়েকদিন ঠাকুর-সকাশে অতিবাহিত করেন দেশবন্ধু।
ঠাকুরের ভাবধারা অনুযায়ী এরপর যখন তিনি দেশসেবার নতুন পরিকল্পনায় ব্রতী হচ্ছিলেন, নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসে
সেবছরই দার্জিলিং-এ ইহলােক ত্যাগ (১৬ই জুন, ১৯২৫) করেন দেশবন্ধু। শােকসাগরে মুহ্যমান হয়ে পড়েন ঠাকুর।
কত কিছু ভেবেছিলেন তিনি দেশবন্ধুকে নিয়ে। কথা প্রসঙ্গে তাঁকে উদ্দেশ্য করে ঠাকুর বার বার বলতেন—“আমার
কথা বলার জন্যে আমি একটাই মুখ পেয়েছিলাম!”

ঠাকুর-সকাশে মহাত্মা গান্ধী

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সবিশেষ অনুরােধে, মহাত্মা গান্ধী ১৯২৫ সালের মে মাসে শ্রীশ্রীঠাকুরের সাথে দেখা
করতে পাবনা সৎসঙ্গ আশ্রমে আসেন। আশ্রমের নানান কর্মপ্রবাহ এবং কুটীর শিল্পগুলি দেখে তিনি অত্যন্ত খুশি
হন। মাতা মনােমােহিনী দেবীর ব্যক্তিত্বে মহাত্মাজী মুগ্ধ হয়ে বলে যান, এমন আশ্চৰ্যজনক ব্যক্তিত্বময়ী মহীয়সী
নারী তিনি আগে কখনও দেখেননি।
মহাত্মাজী একবার কোলকাতায় ঠাকুরের অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে তাঁকে দেখতে এসেছিলেন। মহাত্মাজী বিছানায়
বসার পরই ঠাকুর তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়েন। মহাত্মাজী হাসতে লাগলেন এবং তারপর দুজনের
মধ্যে অনেক আন্তরিক আলাপচারিতা হয়।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ যখন অসুস্থতাজনিত কারণে দার্জিলিং-এ অবস্থান করছিলেন সেই সময় মহাত্মা গান্ধী
দেশবন্ধুর সাথে সেখানে কয়েকদিন অতিবাহিত করেন। এর কিছুদিন পরে দেশবন্ধুর মহাপ্রয়াণ হয়। দেশবন্ধুর
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মহাত্মা গান্ধী “ইয়ং ইন্ডিয়া” পত্রিকায় দার্জিলিং-এর সেই দিনগুলির কথা তুলে ধরেন।
গান্ধীজী লেখেন যে দেশবন্ধুর সান্নিধ্যে দার্জিলিং-এ থাকাকালীন তিনি অনুভব করেছিলেন, কত গভীরভাবে
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন ঠাকুরের আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন।

হেমকবির পরিবর্তন

হেমচন্দ্র মুখােপাধ্যায় ছিলেন সেই সময়ের (১৯২০-এর দশকের) বাংলার বিখ্যাত কবি। সবাই তাকে হেমকবি
নামেই ডাকত। গুণের আধার হলেও হেমকবির মদের নেশা ছিল খুউব। সেই হেমকবি একদিন ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে
দর্শন করতে কোলকাতার হরিতকি বাগান লেনের বাড়িতে এলেন। ঠাকুর তখন সেখানে অবস্থান করছিলেন।
ঠাকুরের প্রেমের কথা তিনি আগেই শুনেছিলেন। ঠাকুরের কাছে তার আসার উদ্দেশ্যই ছিল—ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র
তাকে ঘৃণা করেন কিনা এই পরীক্ষা করে দেখা। হেমকবি যখন মদ্যপ অবস্থায় ঠাকুরের কাছে এলেন, ঠাকুর
তখন তাকে গভীর আলিঙ্গনে কাছে টেনে নেন। ঠাকুরের ভালবাসায় অভিভূত হয়ে তিনি ঠাকুরকে জিজ্ঞাসা
করলেন—আমি মদ খাই, তবু আপনি আমাকে ঘৃণা করেন না কেন?
ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র তখন তাকে বলেছিলেন—আমার বাঁ হাতে যদি ক্ষত হয় তাহলে কি তা আমি কেটে ফেলে
দেব? নাকি ডান হাত দিয়ে সেই ক্ষত জায়গাটিকে সারিয়ে তুলবাে? এই উত্তর শুনে হেমকবি মুগ্ধ হন।
ঠাকুর-দর্শনের ইচ্ছায় কিছুদিনের মধ্যে আবার তিনি পাবনা সৎসঙ্গ আশ্রমে যান। তারপর সেখানে কিছুদিন
অবস্থানও করেন। তারপর একসময় ঠাকুরের অমােঘ ভালাবাসার টানে তিনি মদ খাওয়া ছেড়ে দেন। শুরু হয়
তার নতুন জীবন।

পাবনার কর্মকাণ্ড এবং প্রচার

কীর্তন মানুষকে মাতােয়ারা করে দেয়। এর ফলে ভালাে-মন্দে মেশানাে মানুষের মন্দ দিকগুলি আর মাথা
চাড়া দিতে পারে না। কিন্তু, ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র অনুভব করলেন যে শুধু কীর্তন মানুষের জীবনের নানান
প্রয়ােজনগুলিকে (খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান ইত্যাদি) পূরণ করতে পারে না। তাই কীর্তনযুগের এই প্রবল সম্মিলিত
উৎসাহকে সঠিকভাবে কাজে লাগানাের জন্যে ঠাকুর এবার জোর দিলেন কর্মোদ্যোগে।
তার পরিকল্পনা অনুযায়ী পাবনায় হিমাইতপুর গ্রামে আস্তে আস্তে গড়ে উঠলাে তপােবন বিদ্যালয়, বিশ্ববিজ্ঞান
কেন্দ্র, কাঠের কারখানা, প্রেস, ফিলাথ্রপি অফিস, কেমিক্যাল ওয়ার্কস, কলাকেন্দ্র, কুটীরশিল্প, সৎসঙ্গ ব্যাঙ্ক,
মেকানিক্যাল ওয়ার্কস ইত্যাদি। বায়ুচালিত শক্তিতে আশ্রমে জ্বলে উঠল বাল্ব। আশ্রমবাসীরা নিজের হাতে ইট
কেটে ঘরবাড়ি তৈরি করতে শুরু করল। ঠাকুরের বুদ্ধিতে আশ্রমিকরা সরকারি কন্ট্রাক্ট পেয়ে সস্তায় আশেপাশের
গ্রামে টিউবওয়েল বসাতে শুরু করল। এইসব বাস্তব কাজের মধ্যে দিয়ে পাবনা শহর এবং আশেপাশে সৎসঙ্গের
ব্যাপক প্রচার হতে থাকে। হাজার-হাজার মানুষ অনুকূলচন্দ্রকে গুরুপদে গ্রহণ করতে থাকে। মানুষ নানা সমস্যা
নিয়ে তাঁর কাছে আসতেন এবং সমাধান পেয়ে ফিরে যেতেন। অনুকূলচন্দ্রের সহজাত ভালবাসার পরশে মানুষ
তার প্রতি সহজেই ক্রমশঃ আকৃষ্ট হতে থাকে। বাঁচাবাড়ার বাণী প্রচারের জন্যে ঠাকুর গড়ে তুললেন ঋত্বিক
সংঘ। ঋত্বিকেরা এবার ঠাকুরের অনুমতিক্রমে, আরাে আরাে মানুষকে সৎদীক্ষায় দীক্ষিত করে, জীবনবৃদ্ধির মন্ত্রে
উদ্বেল করে তুলতে লাগলেন।

নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ঠাকুর-দর্শন

আই. সি. এস. (ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষায় পাশ করে দেশে ফেরার পর, ১৯২১ সালে, (নেতাজি) সুভাষচন্দ্র
বসু ঠাকুরের সাথে সাক্ষাতে এলেও ঠাকুরের ইনফ্লুয়েঞ্জাজণিত অসুস্থতার কারণে তাদের মধ্যে বিশেষ কথাবার্তা হয়ে
ওঠেনি। এর কয়েক বছর পর সুভাষচন্দ্র পাবনা সৎসঙ্গ আশ্রমে এসে (১৯২৭-২৮) ঠাকুরের সাথে দেশের এবং দশের
কীভাবে মঙ্গল সম্ভব সেই বিষয় নিয়ে বিশদ আলােচনা করেন। আশ্রমের নানান জনহিতকারী কর্মকাণ্ড দেখে মুগ্ধ হন
সুভাষচন্দ্র। ঠাকুর তাকে বলেন—দেশের সামগ্রিক স্থায়ী কল্যাণ হবে তখনই যখন দেশে সুসন্তানের জন্ম হবে। সেজন্যে
চাই সুবিবাহ। সুভাষচন্দ্রের এতদিন বিশ্বাস ছিল যে শিক্ষার প্রসারেই দেশের উন্নতি হতে পারে। কিন্তু ঠাকুরের কাছ
থেকে এই কথা শােনার পর তিনি বললেন—“এইভাবে তাে চিন্তা করিনি!”
আরও একবার (১৯৩৯) সুভাষচন্দ্র ঠাকুরের সাথে পাবনা হিমাইতপুর আশ্রমে দেখা করতে এলেও বিপুল ভক্তসমাগম
দেখে তিনি ঠাকুরের সাথে আলাদাভাবে কথা বলতে দ্বিধাবােধ করেন। অসুবিধে না হলে ঠাকুর তাকে ঐ রাত্রে থেকে
যেতে বলেছিলেন। কিন্তু পরদিন অন্যত্র বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে হবে বলে তিনি ঠাকুরের অনুরােধ রাখতে
পারেননি।
এরপর তিনি যখন কোলকাতা থেকে অন্তর্ধান করে জার্মান-জাপান চলে যান এবং ‘আজাদ হিন্দ ফৌজে’র নেতৃত্বে
আসীন, সেই সময়ে তার কাছে ঠাকুরের একটি ছবি সবসময় থাকত। এখনও কোলকাতায় এলগিন রােডে নেতাজির
বাসভবেন, তার শােবার ঘরের দেওয়ালে, ঠাকুরের একটি বাঁধানাে ছবি সুসংরক্ষিত, ঠিক আগে যেমনটি ছিল তেমনই।

ঠাকুরের বিদেশী ভক্তেরা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৪৫) পরপরই “আমেরিকান ফিল্ড-সার্ভিস্” গ্রুপের কিছু কর্মী, যুদ্ধে আহত আমেরিকার
সেনাদের সাহায্য করার জন্যে নিযুক্ত হয়েছিলেন। ভারতেও তারা আসেন। কাজ শেষে, তাদের মধ্যে কয়েকজন
কর্মী একদিন রাত্রে ডায়মন্ডহারবার থেকে মােটরগাড়ি করে কোলকাতায় ফিরছিলেন। হঠাৎ রাস্তার ধারে এক
অজপাড়াগাঁয়ে তারা দেখলেন যে বেশ কিছু মানুষ খােল-ঢােল-কাঁসর-ঘণ্টা নিয়ে আনন্দে মাতােয়ারা হয়ে কীর্তন
করছে। তাদের সামনে সুদৃশ্য সিংহাসনে তাদেরই আরাধ্য-দেবতার ছবি। কৌতূহলবশতঃ সেই ফিল্ড-সার্ভিসের
একজন, এডমন্ড স্পেন্সার গাড়ি থেকে নেমে, যাঁর ছবি ঘিরে এই উন্মাদনা তার সম্বন্ধে সব খোঁজখবর নিলেন।
কীর্তনরত ভক্তেরা সানন্দে সব জানালেন স্পেন্সারকে। স্পেন্সারের কৌতুহল এতে আরও বেড়ে গেল। কিছুদিন
পর তিনি সােজা উপস্থিত হলেন পাবনা সৎসঙ্গ আশ্রমে। সচক্ষে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে দেখবেন বলে।
ঠাকুরকে সচক্ষে দেখে এবং তার সাথে কথা বলে মুগ্ধ হয়ে এডমন্ড স্পেন্সার তার দীক্ষা নিলেন। স্পেন্সার
নিজে ছিলেন প্রখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এম. এ.। এরপর স্পেন্সারের উদ্যোগে “আমেরিকান ফিল্ড সার্ভিস্
গ্রুপের আরও কিছু কর্মী ঠাকুরের দীক্ষা গ্রহণ করলেন। তাদের মধ্যে রে আর্চার হাউজারম্যান ছিলেন অন্যতম।
পরবর্তীকালে, এঁরা দু’জনে ভারতে থেকে ভারতে এবং বহির্বিশ্বে ঠাকুরের ভাবধারাকে প্রচার করেন। ঠাকুরকে
নিয়ে রে আর্চার হাউজারম্যান যে জীবনীমূলক বইটি লেখেন তার নাম “ওশান ইন এ টি কাপ” (বিন্দুতে সিন্ধু)।
বইটি প্রকাশ করেছিলেন আমেরিকার প্রখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা “হার্পার এন্ড ব্রাদার্স”। সেই সূত্র ধরে সেই প্রকাশনা
গ্রুপের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ইউজিন এক্সম্যান সাহেবও ১৯৬১ সালে দেওঘরে এসে ঠাকুর-দর্শন করে তার দীক্ষা
গ্রহণ করেন।

পাবনা থেকে দেওঘর

১৯৪৬ সাল। দেশ জুড়ে অশান্তি।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়েছে। ঠাকুরের
শরীর ও মন ভাল নেই। ডাক্তার বায়ু-
পরিবর্তনের নির্দেশ দিলেন। সেইমত,
ঠাকুরের ইচ্ছানুযায়ী বিহারের সাঁওতাল
পরগণার দেওঘরে আসার সব ব্যবস্থাদি
হয়ে গেল (ট্রেনের টিকিট রিজার্ভেশান,
ঘরভাড়া ইত্যাদি)। ১৯৪৬ সালের ১লা
সপ্টেম্বর মন খারাপ করা ঝিরঝিরে
বৃষ্টিমাখা দিনে, আত্মীয়-স্বজন ও ভক্তবৃন্দসহ
ঠাকুর রওনা হলেন দেওঘরের উদ্দেশে।
পাবনা থেকে মােটরগাড়ি যােগে ঈশ্বরদি
স্টেশান, সেখান থেকে ট্রেনে নৈহাটী।
নৈহাটী থেকে ট্রেনে ব্যান্ডেল, ব্যান্ডেল
থেকে ট্রেনে বৈদ্যনাথধাম। অবশেষে দীর্ঘ
৫৮ বছর অতিবাহিত করে, তিলে তিলে
গড়ে তােলা হিমাইতপুর আশ্রম ছেড়ে
দেওঘরে চলে এলেন দয়াল। ২রা সেপ্টেম্বর
সকালবেলায়। আগে থেকে ভাড়া করা
সেই “বড়াল-বাংলাে বাড়িটিতে উঠলেন
ঠাকুর। আশেপাশের বাড়িগুলিতে বাকিদেরও
থাকার ব্যবস্থা হয়ে গেল। ক্রমে এখানেই
প্রতিষ্ঠিত হল নবকলেবরে সৎসঙ্গ আশ্রম।
জীবনের বাকি ২২টি বছর ঠাকুর মােটামুটি
এখানেই অতিবাহিত করেছেন। পাবনায়
আর তাঁর ফেরা হয়নি। ১৯৪৬ (দেওঘরে ঠাকুরের শুভাগমন) থেকে ১৯৬৯ (ঠাকুরের মহাপ্রয়াণ) অবধি ঠাকুর
মােটামুটি দেওঘরেই ছিলেন। পাবনার হিমাইতপুর আশ্রমের মত ক্রমে দেওঘরেও প্রতিষ্ঠা করলেন তপােবন
বিদ্যালয়, হাসপাতাল, ফিলানথ্রপি অফিস, প্রেস, ওষুধশিল্প, কার্পেন্টারি ওয়ার্কসপ, জলপ্রকল্প, আনন্দবাজার ইত্যাদি।
পশুপক্ষীর ভাষা শেখার দুর্নিবার ইচ্ছায় ক্রমে তৈরি হল চিড়িয়াখানাও। দেশভাগের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ বহু
বাস্তুহারা মানুষ দেওঘরে ঠাকুরের আশ্রয়ে এসে জীবন পেল। বছরভর নানান উৎসবে ভারতের নানান জায়গা
থেকে স্পেশাল ট্রেন আসতে লাগল দেওঘরে। দেশবিদেশের গণ্যমান্য মানুষেরা আশ্রমে এসে ঠাকুরের সাথে
নানান বিষয়ে আলােচনা করে মুগ্ধ হলেন। আর আর্তপীড়িত সাধারণ মানুষেরা তার স্নেহ-সান্নিধ্যে এসে জীবনের
দুঃখ জয় করে নতুনভাবে বাঁচার আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠতে লাগল।

হনুমানকে রক্ষা

সব জীবের প্রতিই ছিল ঠাকুরের গভীর ভালবাসা। একবার সৎসঙ্গ আশ্রমে একজন একটি ছােট্ট হনুমানের
বাচ্চা পুষেছিলেন। তার কোমরে শিকল বাঁধা থাকত। একদিন শিকলের মাঝখানটা খুলে গেলে হনুমানটি পালিয়ে
গেল। শিকলের বাকি অংশ হনুমানটির কোমরে বাঁধা অবস্থাতেই থেকে গেল। ঐ অবস্থাতেই সে গাছে গাছে
ঘুরে বেড়াত। লােকের বাড়ি বাড়ি এসে খাবার খেত। কোমরে বাঁধা শিকল নিয়েই হনুমানটি বড় হতে লাগল।
ফলে ক্রমশঃ ঐ শিকল কোমরে এমনভাবে এঁটে গেল যে ওর শরীরের নিচের দিকটা রক্ত চলাচলের অভাবে
ঠিকমত বাড়তে পারল না। হনুমানটি ক্রমশঃ শীর্ণ হয়ে যাচ্ছিল। সে আর স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারত না।
শরীরটা টেনে টেনে কোনমতে চলত। ঠাকুর একদিন হনুমানটিকে ঐভাবে দেখতে পেলেন। তার চলার ভঙ্গী
দেখে ঠাকুরের দরদী প্রাণে কষ্ট হল। তিনি কয়েকজনকে ডেকে শিকলটা খুলে দেওয়ার জন্যে বললেন। ঠাকুরের
ইচ্ছানুযায়ী খাবারের লােভ দেখিয়ে, জাল ফেলে হনুমানটিকে ধরা হল। তারপর অতি সাবধানে কোমরে এঁটে
বসা সেই শিকল কাটা হল। সুস্থ হলে হনুমানটিকে ছেড়ে দেওয়া হল। কিছুদিনের মধ্যেই তার নিম্নাংশ স্বাভাবিক
হয়ে গেল। হনুমানটি দিব্যি লাফালাফি করে বেড়াতে লাগল। ঠাকুর স্বস্তি পেলেন।
আরেকটি ঘটনা। দেওঘর সৎসঙ্গ আশ্রমেই একবার একটি হনুমান কুকুরের কামড়ে মারাত্মক জখম হয়। রক্ত
ঝরঝর করে পড়তে থাকে। আশ্রমের ডিপেনসারির একটি ছােট্ট ঘরে রেখে ঠাকুর সেই হনুমানটির চিকিৎসার
ব্যবস্থা করে সুস্থ করে তােলেন। হনুমান যেন তার পরমাত্মীয়।

গাছের প্রতি মমতা

দেওঘর সৎসঙ্গ আশ্রমে আরবতিতে একসময় ত্রিপল দিয়ে তৈরি হোক, যে ২টি হল তাকে হত
তাসুর ঘর। সেখানে এখন নটমণ্ডপ তৈরি হয়েছে। ওই তা র সম হল যে একটা বল নাই। এই
হে হে সুমিষ্ট বেল হত ঐ বেলগাছেরই এক শকত মটর ও কম খ ন উ ইs হল ,
একদিন ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে শক.. হট খেলেন তর সয় সামান্য চ = = জ ম
তাঁর সঙ্গে ছিলেন বঙ্কিম রায় এবং তার মা তার রকে ধরে ফেলেন তার পর তার বাম কে
দেখতে পেয়ে খোঁজ করতে লালন কে পর বর্তক হজ হ হ হ ত হ জ = =
পারলেন যে তিনি ঐ শকতটি কেটে র জ ক খজত হয়েছিলেন এই শুনে তার জন্ম হয়
উঠলেন। বেলগহর অঙ্গহানির ম হ ভষয় ভরান্ত মন বক্তকে বললেন—হাঁটার সময় আমার
কনুই যদি তাের গায়ে তাে নয়, তুই ত তাহলে আমর ই কত লেব? হ ত আর নয়
দোষ আমার আমারই দেখে ১ ভটং হল বানর হলেন সর্বজবে তাঁর মত হল এই
আরেকটি ঘটনা। দেওঘরে আশ্রমে এক ঘর নিরল-নবম) তার ২য় জন চর হবে তত
(একটি তালিম গাই, একটি সজনে, দুটি চর গহ) করে সরকারলে অশ্রম ক
কোনক্রমে এই ঘটনার কথা ঠাকুর তাঁরই ভক্ত মায়াম সীমার কাছে জানতে পেরে উদ্বিগ্ন মনে তাকে বলেন-
গ্রহগুলি যদি তােমার পেটের সন্তান হত, তাহলে তুমি কত সারতে ময়মম হতহ অবশেষে গত
কাটা থেকে আশ্রমিকরা বিরত হলেন। ঠাকুরের নির্দেশে সেদিন পুরবেলায় ঐ গহগুলির গয়া মরহ
গাইগুলি তুলে (যাতে শিকড়গুলি ঐ মাটির চই-এর মধ্যেই থাকে) সংলগ্ন অন্য জায়গায় আবার এত দেওয়া
হল। স্বস্তি পেলেন দয়াময়।

জীবন-বিজ্ঞানী

ছােটবেলা থেকেই অনুকূলচন্দ্রের ছিল প্রবল বিজ্ঞানী মন। স্টীমারে করে যেতে যেতে স্টীমারের ইঞ্জিনের
গঠনপ্রণালী দেখে বালক অনুকূলচন্দ্রের ছােট্ট ইঞ্জিন বানানাের সখ হল। গন্তব্যে পৌঁছে যন্ত্রপাতি যােগাড় করে
অভিনব ইঞ্জিনও তৈরি করে ফেলে বালক। বিকট শব্দে ফেটে যাওয়ার আগে কটকট শব্দে সেই ইঞ্জিন চালুও
ছিল কিছুক্ষণ।
“ধন্বন্তরী” ডাক্তার হিসেবে পরিচিত অনুকুলচন্দ্র একসময় অজপাড়াগাঁ হিমাইতপুরে তৈরি করলেন “বিশ্ববিজ্ঞান
কেন্দ্র”। বায়ুর তড়িস্তর থেকে নিখরচায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের গবেষণায় নিমগ্ন হল “বিশ্ববিজ্ঞান কেন্দ্র”। আবার
নিরন্তর বায়ুপ্রবাহ থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করার তীব্র তাগিদে হিমাইতপুর পদ্মাপারে কয়েকটি উইন্ডমিল বসালেন
ঠাকুর। অন্ধকার দূর করে গ্রাম থেকে গ্রামে জ্বলে উঠল আলাে। ঠাকুরের ফর্মুলায় নানান গাছ-গাছড়া থেকে
তৈরি হতে থাকল নানান জীবনদায়ী ওষুধ। মরা মানুষকে কম্পন-প্রয়ােগে কীভাবে বাঁচানাে যায় সেজন্যে প্রতিষ্ঠা
করলেন “প্রাণ-অনুসন্ধানী সমিতি”। ভাবলেন “ভাইব্রোমিটার” নামে যদি একটা যন্ত্র বানানাে যায় তাহলে সেই
যন্ত্র থেকে উপযুক্ত কম্পন তৈরি করে মৃত শরীরে প্রবাহিত করে মানুষটাকে বাঁচিয়ে তােলা যাবে। পশুপাখীর
ভাষা শিখতে দেওঘর সৎসঙ্গে গড়ে তুললেন চিড়িয়াখানা। শুধুমাত্র বিজ্ঞানের নানান দিক আর সম্ভাবনা নিয়ে
তার বইটির নাম “বিজ্ঞান-বিভূতি”। বিজ্ঞানকে ভিত্তি করে, উপযুক্ত বাবা-মার মিলনে কীভাবে সুসন্তানের জন্ম
হতে পারে, তা-ও ল্যাবরেটরিতে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন ঠাকুর! জীবনের জন্যে যা যা চাই, তার অন্বেষণ-
বিকাশই তার কাছে বিজ্ঞানচর্চা। তাই যে তিনি জীবন-বিজ্ঞানী।

ঠাকুরের সাহিত্যরাজি

১৯২৬ সালে কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যখন পাবনা সৎসঙ্গ আশ্রমে এসেছিলেন, ঠাকুর তাকে বিয়ােগান্তক
লেখার চেয়েও জীবনবর্ধনকারী প্রেরণামূলক সাহিত্য রচনা করতে উৎসাহ দিয়েছিলেন। যদিও নিজের হাতে তিনি
স্কুলে পড়াকালীন “দেবানী” নামে যে একাঙ্ক নাটকটি লিখেছিলেন তা ছিল পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে। এরপর,
ভক্তের আকূল আগ্রহে, একরাতে, জীবনচলার যে নির্দেশিকা তিনি রচনা করেছিলেন তাই-ই পরবর্তী সময়ে
“সত্যানুসরণ” বই হিসেবে প্রকাশিত হয়। নানান সমস্যা নিয়ে মানুষ আসতে লাগল তার কাছে। আর, সবার
মঙ্গলকামনায় ক্রমে গদ্যে-পদ্যে, ইংরেজি-বাংলায় হাজারে-হাজারে বাণী দিতে লাগলেন ঠাকুর। ফল্গুধারার মত
তাঁর শ্রীমুখ দিয়ে বাণী নিঃসৃত হত আর অনুলেখকরা তা লিপিবদ্ধ করে নিতেন। পরবর্তীকালে সেইসব বাণীগুলি
(ইংরেজিতে প্রায় আড়াই হাজার, বাংলায় গদ্যে-পদ্যে প্রায় কুড়ি-হাজার) নিয়ে প্রকাশিত হতে থাকল তার অমৃত-
পুস্তকরাজি—“চলার সাথী”, “নারীর নীতি”, "The Message", “অনুশ্রুতি”, “আদর্শ-বিনায়ক”, “বিধান-
বিনায়ক”, “দেবী-সূক্ত”, “নিষ্ঠা-বিধায়না ইত্যাদি। উৎসুক ভক্তদের নানাবিধ প্রশ্নের উত্তরে যা যা বলেছেন,
সেগুলি নিয়ে সংকলিত হয়েছে “আলােচনা-প্রসঙ্গে”, “ইসলাম প্রসঙ্গে”, “নানা প্রসঙ্গে”, “কথা প্রসঙ্গের মত
জীবনসাহিত্য। তাঁর তৈরি নতুন নতুন শব্দ বাংলা সাহিত্যের পরম সম্পদ।
জীবন-সায়াহ্নে মাঝে মাঝেই তিনি তার ভক্তদের জিজ্ঞাসা করতেন—কিছু বাকি থেকে গেল না তাে? সমাজ,
কৃষি, প্রশাসন, শিক্ষা, বিজ্ঞান থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, সাধনা, আদর্শ, অর্থনীতি, দর্শন সব বিষয়েই তার সহজ
এবং মননশীল বিচরণ। সাহিত্যের উদ্দেশ্য ঠাকুরের কাছে শুধুই হিতসাধন।

ঠাকুর ও মনীষিবৃন্দ

ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন-যুল ফুটলে ভ্রমর আপনি জোটে”। কোলকাতায় প্রথম দর্শনেই মুগ্ধ হয়ে
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ তুরের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সাথেও ঠাকুরের বহুবার
সকাং হয়েছিল তার বাবা-মা হলেন কুরের অনুগামী ভক্ত। মহাত্মা গান্ধী, ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ, শ্যামাপ্রসাদ
মুখােপাধ্যায় যেমন ঠাকুরের সান্নিধ্যে এসেছিলেন তেমনি এসেছিলেন সাহিত্যিক তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, আশাপূর্ণা
দেব, অমিত কুমার সেনগুপ্ত। বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু, জ্ঞান ঘােষ, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ—এই ত্রয়ী বিজ্ঞানী
এবার হিমাইতপুর সৎসঙ্গ আশ্রমে এসেছিলেন ঠাকুরের তৈরি বিজ্ঞান-কলেজ দেখতে। যাদুকর পি.সি. সরকার
হিলেন ঠাকুরের মহশিষ্য। বাংলায় মুখ্যমই ফজলুল হক, আসামের জননেতা গােপীনাথ বরদলৈ, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী
বিনেদানন্দ বা, ভারতের প্রধানমন্ত লালবাহাদুর শাস্ত্রী ঠাকুরের দর্শন এবং অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় মুগ্ধ হন।
যার বলতেন—“দেশের পরিচালিকাশক্তি যদি সং ও আদর্শপ্রাণ হয় তবেই দশ ও দেশের উন্নতি তরতরে হয়ে ওঠে।"

ঈশ্বর এক, ধর্ম এক

ঈশ্বর নরদেহ ধারণ করে বারে বারে এই ভারতবর্ষের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন। যুগের উপযােগী করে
তারাই বাঁচাবাড়ার পথ দেখিয়ে দেন মানুষকে। মানুষের মঙ্গলের জন্যে। ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেন—হিন্দুধর্ম,
মুসলমান ধর্ম, খ্রীষ্টান ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম আলাদা নয়। ধর্ম একই। ওগুলাে নানান মত। অনুকূলচন্দ্র আরাে বলেন—মত
বহু হতে পারে, কিন্তু তা বলে ধর্ম বহু হতে পারে না। ধর্ম মানে হল ধারণ করা (সংস্কৃত ধৃ ধাতু থেকে ধর্ম
কথার উৎপত্তি যার অর্থ ধারণ করা)। ঠাকুর ধর্ম বলতে তাই বুঝিয়েছেন—যা করলে জীবন-ধারণ ও বৃদ্ধির
পথ অবারিত হয়। ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র তাই বললেন—“অন্যে বাঁচায় নিজে থাকে, ধর্ম বলে জানিস্ তাকে।”
ঠাকুরের মতে—একজন খাঁটি মুসলমানের সঙ্গে একজন খাঁটি হিন্দুর বা একজন খাঁটি খ্রীষ্টানের কোন বিভেদ
নেই। কোন খ্রীষ্টান ঠাকুরের দীক্ষা নিলে ঠাকুর তাকে কখনও হিন্দু হতে বলেননি। বলতেন—খাঁটি খ্রীস্টান হতে।
কোনও মুসলিম ঠাকুরের দীক্ষা নিলে ঠাকুর তাকে খাঁটি মুসলিম হতে প্রেরণা দিতেন।
যুগের প্রয়ােজনে, যুগে যুগে মহামানবেরা এসে মানুষকে বাঁচা-বাড়ার পথ দেখান। ঐ পথই তখন সেই যুগের
ধর্ম, যে পথে চললে সবাইকে নিয়ে জীবনবৃদ্ধির আনন্দে মেতে ওঠা যায়।

মহাপ্রয়াণ

সবে ৮০ পেরিয়েছে। প্রকৃতির নিয়মেই
তার মানব শরীর আর যেন পেরে উঠছে
। তার প্রিয় মানুষ আর সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে
তিনি যেন অনন্তের পথে যাওয়ার জন্যে
প্রস্তুত হচিছলেন। ১৯৬৯ সালে ২৭শে
জানুয়ারি। দেওঘরে প্রচণ্ড শীতের দাপটে যে
যার ঘরে শুয়ে আছে। তখনও ভােরের আলো
ফোটেনি। কুয়াশায় আচ্ছন্ন রাস্তাঘাট। নিঝুম
শান্ত প্রকৃতি। তখন রাত প্রায় দেড়টা। ঠাকুর
কেমন যেন অস্বস্তি বােধ করছেন। ঘুমােতে
পারছেন না। এইভাবে অস্বস্তি বাড়তে থাকে।
কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। তা ক্রমশঃ
বাড়তে থাকে। প্রয়ােজনীয় ওষুধ, ইনজেকশন
সবই দেওয়া হল। কিন্তু সবই বিফল। ভােরের
আলাে ফোটার আগেই, ব্রাহ্মমুহূর্তে মহাপ্রস্থানের
পথে যাত্রা করলেন মহাপথিক।
ঠাকুরের কাছে যারা ছিলেন তারা সবাই
কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। ক্রমে সেই আর্তনাদ
ঠাকুরবাড়ি থেকে আশ্রমে ছড়িয়ে পড়ল।
বেলা বাড়ার সাথে সাথে আশ্রমমুখী মানুষের
ভীড়ও বাড়তে থাকে। রেডিও মারফৎ এই
খবর পৌঁছে যায় মানুষের ঘরে ঘরে। চতুর্দিক
থেকে ট্রেনে-বাসে শােকাকুল মানুষের দল
আসতে থাকে ঠাকুরবাড়িতে, তাদের প্রাণময়কে
শেষবারের মত একবার চোখের দেখা দেখতে।
রক্তিম সূর্য যখন দিগন্তে ঢলঢল, তার
পার্থিব শরীরে অগ্নি সংযােগ করা হয়।
“বন্দেপুরুষােত্তমম্‌” ধ্বনির আর্ত-মর্মস্বরে
দিক-বিদিক বিদীর্ণ করে চিৎকার করে
ওঠে হাজার-হাজার মানুষ। শুরু হল
সান্ধ্য-প্রার্থনা—“বার বার করু বিনতি’ | সূর্য
অস্তগামী। পৃথিবীর মানুষকে চোখের জলে
ভাসিয়ে সবার প্রিয়পরম যাত্রা করলেন পরম
জ্যোতির্লোকে।

ঠাকুরের একান্ত ইচ্ছাগুলি

১৯৬১ সালে আমেরিকার প্রখ্যাত সাংবাদিক জেম্স মাইকেল, দেওঘর সৎসঙ্গ আশ্রমে এসেছিলেন। ঠাকুরের
ভাবাদর্শের সারাংশ কী তা জানতে চাওয়ায় ঠাকুর তাকে বলেছিলেন—“Be Concentric”। তার মানেই হল
“এককেন্দ্রীক হও”। অর্থাৎ, সবাই যেন এককেন্দ্রিক হয় বা আদর্শকে মেনে চলে। প্রত্যেক মানুষেরই জীবনে
চাই মহাপূরক আদর্শ বা গুরু। গুরুর প্রতি অনুরাগ ও ভালাবাসা রেখে তার কথামত বাঁচাবাড়ার নিয়ম মেনে
জীবনকে পরিচালনা করতে হবে। শুধু নিজে বাঁচলে বা বেড়ে উঠলেই হবে না। নিজের বাঁচা-বাড়ার সাথে
পারিপার্শ্বিককেও বাঁচা-বাড়ায় উচ্ছল করে তুলতে হবে। এইভাবে জীবনবৃদ্ধির পথে চলতে চলতে আর ইষ্টনাম
জপসাধনার গুণে প্রত্যেকটি মানুষ পরমচেতনার অধিকারী হয়ে উঠুক। এই-ই চেয়েছিলেন পরমদয়াল
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র।
এছাড়াও ঠাকুরের ইচ্ছা ছিল ভাইব্রোমিটার
তার কিছু স্বপ্ন বাস্তবে রূপায়িত
হােক। সেগুলির প্রধান কয়েকটি Fan
হল—
পৃথিবীর সর্বোত্তম জ্ঞানরাজির
সৃষ্টি ও বিতরণের কেন্দ্রস্বরূপ একটি
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা যার নাম হবে
“শাণ্ডিল্য বিশ্ববিদ্যালয়”।
সবরকম চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ
একটি অত্যাধুনিক হাসপাতালের
প্রতিষ্ঠা যার নাম হবে “দুতদীপ্তি
হাসপাতাল।
* মৃত মানুষকে বাঁচিয়ে তােলার
অভিনব যন্ত্রের উদ্ভাবন যার
নাম ঠাকুর স্বয়ং রেখেছিলেন
“ভাইব্রোমিটার” |
সন্নিহিত খরাপ্রবণ অঞ্চলকে শস্যশ্যামলা করার জন্যে দেওঘরের দারােয়া নদীর সাথে গঙ্গার সংযােগ।
সৎসঙ্গের পক্ষ থেকে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ যার মাধ্যমে ভারতীয় কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও
বাঁচাবাড়ার কথা দেশময় ছড়িয়ে পড়বে।
SWITCH
৫।
• আদর্শপ্রাণ কয়েকজন প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়কদের (ঠাকুর যাদের বিধি-বিনায়ক’ বলেছেন) নিয়ে আন্তর্জাতিক
সর্বোচ্চ সংস্থা তৈরি যাদের মিলিত উদ্যোগে সাধিত হবে বিশ্বকল্যাণ।
সর্বোপরি ঠাকুর চেয়েছেন, কোটিতে কোটিতে আদর্শকেন্দ্রিক উপযুক্ত মানুষ যাদের বাঁচাবাড়া আর সহমর্মিতার
যুগলবন্দীতে মানব সমাজ আলাের পথে এগিয়ে যাবে। ঠাকুরের ঐকান্তিক আশা—প্রত্যেকটি মানুষ “জীবন্ত
মন্দির” হয়ে উঠুক। বন্দেপুরুষােত্তমম্।

Comments

Popular posts from this blog

Tumi Jemon Kore Chalate Chao Lyrics

Tumi Jemon Kore Chalate Chao Lyrics    Tumi Jemon Kore Harmonium Tutorial Tmi jmn kre chalate Chao chalte pri na Mnr majhe Nitya jge Hajar bahana. Tmr kache peye peye Kate amr Bela Kichui to hay hayna kra sudhui abahela. Tmr chinta kmn kre rakhbe Amy urddhe dhare Ami to hay tmn kre chalte prina. Tmr mnr Mata kre Dayal Amay nao kre Chaluk bisva bhuban jure chaoya haoyar khala. Dhana Dhanya Lyrics

Dhana Dhanya Lyrics

 Dhana Dhanya Lyrics Dhana Dhanya Harmonium Tutorial Bengali: ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি ও সে সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি। চন্দ্র সূর্য গ্রহতারা, কোথায় উজল এমন ধারা কোথায় এমন খেলে তড়িৎ এমন কালো মেঘে তার পাখির ডাকে ঘুমিয়ে উঠি পাখির ডাকেজেগে। এত স্নিগ্ধ নদী কাহার, কোথায় এমন ধুম্র পাহাড় কোথায় এমন হরিত ক্ষেত্র আকাশ তলে মেশে এমন ধানের উপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে। পুষ্পে পুষ্পে ভরা শাখি ...

Praner Thakur Sri Anukul Lyrics

Praner Thakur Sri Anukul Lyrics Praner Thakur Sri Anukul Harmonium Tutorial   প্রাণের ঠাকুর শ্রী অনুকূল তুমি জীবের মূল আমার অনুকূল তোমার পূজা করবো বলে তুলেছি ফুল ঠাকুর অনুকূল আমার শ্রী অনুকূল।। এসো হে দয়াময় অনুকূল তুমি ছাড়া এ সংসারে সবই দেখি ভুল তুমি নিজ গুনে কৃপা করে দাও চরণযুগল প্রাণের ঠাকুর শ্রী অনুকূল ..... হৃদমাঝারে দাঁড়াও এসে ও হরি তোমার পূজা করবো নিষ্ঠা ভক্তি ভরি আমার নয়ন জলে ধুয়ে দেব চরণ কমল প্রাণের ঠাকুর শ্রী অনুকূল ...... গৌতম বলে মায়ার খেলা কতকাল কৃপা দৃষ্টি দিয়ে কাটো ভয় মায়াজাল আমার পিঞ্জিরায় ওই পাখিটি আজ হয়েছে ব্যাকুল প্রাণের ঠাকুর শ্রী অনুকূল.... Hathat Jere Ghor Legeche Lyrics

Buy Your Favourite Satsang Books