![]() |
Sri Sri Thakur and Astrologer |
কলকাতার নিউ আলিপুর ৯৮ই নলিনী রঞ্জন এভিনিউ নিবাসী সঙ্গভ্রাতা শ্রদ্ধেয় শ্রীযুক্ত চন্দ্রনাথ বৈদ্য মহাশয় তাঁর নিজ জীবনের একটি ঘটনা-------
তখন ১৯৩৫ সাল। আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে পাবনা সৎসঙ্গ আশ্রমে গিয়ে দুই দিন অবস্থান করি।তারপর ফেরার সময় ঠাকুরের কাছে গিয়ে বিদায় গ্রহন করি।এই সময় ঠাকুর সহসা আমার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন---- কীরে মা, কিছু বলবি।.... মনে হলো ঠাকুর যেন অন্তর্যামী রূপে আমার স্ত্রীর মনের অব্যক্ত গোপন কথাটি জানতে পেরেছেন।কিন্তু আমার স্ত্রী লজ্জায় সে কথা প্রকাশ করতে না পেরে ঠাকুরের কথার উত্তর না দিয়ে নীরবে মুখ নামিয়ে রইল।আমি তখন ঠাকুরকে বললাম----, বিয়ের ৭/৮ বছর হতে চলল।ওর কোন সন্তানাদি না হওয়ায় ওর মনে খুব কষ্ট, হয়তো এই কথায় বলতে চায়।শ্রীশ্রীঠাকুর তখন বললেন----- তোর বয়সই বা কত, তোর চিন্তাই বা কি আছে।ছেলেমেয়ে তোর নিশ্চই হবে।
সিদ্ধবাক মহাপুরুষ ঠাকুরের কথামতো সেই বছরই আমার এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।এরপর একটি পুত্র ও কন্যাসন্তানের জন্ম হয়।
আমার পুত্র সন্তানটি জন্মানোর পর বিখ্যাত জ্যোতিষী দিয়ে তার কোষ্ঠী করানোর পর জানা গেল, যে সন্তানটি অত্যন্ত অল্প আয়ু নিয়ে জন্ম গ্রহন করেছে।
শ্রীশ্রীঠাকুরের চরণে এই কথা নিবেদন করাতে তিনি বললেন---- ওর সিংহ রাশি তো? ওর সব ভালই হবে।অল্প আয়ুতে কিছু এসে যাবে না।
ঠাকুরের এই অভয় বাণীতে আমি আশ্বস্ত হয়ে ভাবলাম, আমাদের পুত্র হবার কোন আশা ছিল না।তাঁর আশীর্ব্বাদেই যখন পুত্র হয়েছে তখন শত অনিষ্ট থাকলেও তাতে কোন ক্ষতি হবে না।তাঁর কৃপায় এ সন্তান নিশ্চয়ই দীর্ঘজীবী হবে।আমরা তখন কাজের জন্য রেঙ্গুনে থাকতাম। আমি তখন বর্মা গভমেন্টের অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেলের অফিসের সুপারিন্টেনডেন্ট।তখন ওখানে বসন্ত রোগের প্রাদুর্ভাব হয়েছিল।এই সময় একদিন আমার পাঁচ মাস বয়সের শিশু পুত্রটির জ্বর দেখে ভীত হয়ে পড়লাম।দু'-একদিনের মধ্যে তার গায়ে বসন্ত রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেল।বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা পরীক্ষার পর জানা গেল বসন্ত রোগের এই টাইপটি মারাত্মক। এই শিশুটির জীবনের আশা করা চলে না।এই অবস্থায় আমি ঠাকুরকে একখানি পত্র লিখলাম।এর ৪/৫ দিন পর ঠাকুরের নিকট থেকে করুণামাখা পত্র পেলাম।সেই পত্রে তিনি জানান,---- ''হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাই উপযুক্ত হবে আর চন্দনঘটিত ওষুধ ব্যবহার করাই শ্রেয় হবে, কোন উগ্র ওষুধ যেন ব্যবহার না করা হয়।
শ্রীশ্রীঠাকুরের এই পত্র পেয়ে আমরা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ি।কারণ বিশেষজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার পাওয়া এই অঞ্চলে বড় কঠিন। তারপর চন্দনঘটিত ওষুধ কোথায় পাওয়া যাবে তাও বুঝতে পারছিলাম না।
এই রকম যখন ভাবছি তখন আমারই এক হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার বন্ধুর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়।সেই একটি স্থানীয় লোকের সন্ধান দেয় যে চন্দন জড়ি বুটি দিয়ে ওষুধ তৈরী করে বসন্ত রোগের চিকিৎসা করে।তাকে ডেকে আনা হয়।সে শিশুটিকে নানাভাবে পরীক্ষা করার পর তার চিকিৎসার ভার নিতে রাজি হয়।কিন্তু আমি আধুনিক ডাক্তারী বিদ্যায় অপারদর্শী একজন দেশীয় লোকের হাতে শিশুপুত্রের চিকিৎসার ভার সম্পূর্ণ ছেড়ে দিতে কিছুটা ইতস্তত করছি দেখে সে নিজেই শিশুটির গায়ে ওষুধ মাখিয়ে দেয়।প্রথমে শিশুটি অসুস্থ বোধ করলেও পরে আরাম বোধ হওয়ায় ঘুমিয়ে পড়ে।এইভাবে চিকিৎসা চলতে থাকায় দেখা যায় যে বসন্তের গুটি আর বাড়ল না। ক্রমেই সেগুলো শুকাতে শুরু করল।আর পূর্বেই যে গুটিগুলো হয়েছিল সেগুলো পাকতে শুরু করে।এই অবস্থায় একদিন বিকালে ঐ দেশীয় চিকিৎসক আমাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে সেই গুটিগুলি কাঁটা দিয়ে ফাটিয়ে দেয়।তার চলে যাবার পর রোগীর অবস্থা আবার ভীষণ রকম খারাপ হয়ে পড়ে।অভিজ্ঞ অ্যালাপ্যাথিক চিকিৎসক ডাঃ ঘোষ শিশুকে পরীক্ষা করে বলেন যে শিশুটি দু'ঘন্টার বেশী বাঁচবে না।বাড়িতে হুলুস্থূল পড়ে গেল।আমি ঠাকুরঘরে গিয়ে একমনে ঠাকুরের নাম জপ করতে লাগলাম।আর মনে মনে বলতে লাগলাম----
''হে ঠাকুর তুমি তো বলেছিলে ওর সব ভাল হবে।অল্প আয়ুতে কিছুই এসে যাবে না, ''তোমার কথা কি মিথ্যা হবে? জ্যোতিষীর কথাই ঠিক হবে? তাও কি কখনও হতে পারে? হে ঠাকুর তুমি দয়া কর।বালকের প্রাণ ভিক্ষা দাও।এইভাবে জানাতে জানাতে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি।এই অবস্থায় আমি দেখি ঠাকুর সাদা চাদর গায়ে, পরনে সাদা ধবধবে ধূতি,পায়ে কাল চটি জুতো ও হাতে একখানা লাঠি নিয়ে বাতাসে ভর দিয়ে অমিত বেগে ছুটে এসে আমার ঠাকুর ঘরের দরজার ভিতর দিয়ে প্রবেশ করে শিশুটির শয়নকক্ষে প্রবেশ করে এক পা খাটের নিচে, মেঝেতে অপর পা শিশুটির মস্তকের সন্নিকটপ স্থাপন করে গুরুগম্ভীর গলায় বলেছেন-- আমি এখানে দাঁড়ালাম, দেখি একে কে নিতে পারে।
এইভাবে অজ্ঞান অবস্থায় কতক্ষণ ছিলাম জানি না।জ্ঞান ফিরে আসতে শিশুটির শয়নকক্ষে প্রবেশ করে দেখি গুরুভায়েরা সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।মণিদা শিশুর নাড়ী পরীক্ষা করে বললেন, বিপদ কেটে গেছে।এরপর ৩/৪ দিনের মধ্যে শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠল।
★★★★★★★★★
আমরা যারা তাঁকে লভেছি, তাঁকে বিশ্বাস করেছি, শপেছি, ভালবাসার চেষ্টা করছি সদা-সর্ব্বদা।আমরা সর্ব্বদা সুখের পথযাত্রী শান্তির শীতল বৃক্ষের ছায়ার হৃদয়ে গরলের কণ্টকাকীর্ণ নেই।তাই আসুন তাঁর ছায়া তলে, কৃপাসিন্ধুর নিত্য-নূতন অমৃতসুধা গ্রহন করতে।আলোর পানে নিজেকে উদ্ভাসিত করুন, দেখবেন সমস্ত কোষগুলো রোমাঞ্চিত হয়ে উঠেছে,হৃদয় পুলকিত হচ্ছে।তাঁর করুণাঘন আঁখি থেকে করুণার বর্ষণ, বর্ষিত হ'চ্ছে আমাতে-আপনাতে।
Comments
Post a Comment