বড়খােকার আবির্ভাব
Sri Sri Boroma
১৩১৮ সন—সরসীবালা আসন্ন প্রসবা। কিছুদিন হল তিনি পিত্রালয়ে এসেছেন, প্রসববেদনায়
খুবই কষ্ট পাচ্ছেন। কিন্তু বেদনা হতে মুক্তি পাবার কোন লক্ষ্মণ তখনও দেখা যাচ্ছে না। অগ্রহায়ণ
মাস পড়ে গেল। সেদিন শীতের সন্ধ্যাকাশ, পৃথিবী ধূসর। সরসীবালা মা হলেন (৫ই অগ্রহায়ণ)
এক পুত্র-সন্তানকে কোলে নিয়ে। সঙ্গে সঙ্গে হিমাইতপুরে সে সংবাদ পৌঁছে গেল। সেখানে
সকলের মনে সেদিন আনন্দের ঢেউ বয়ে গেল। শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর পুত্র সম্বন্ধে লিখে রাখলেন
নিজের ডায়েরীতে। পিতার প্রচেষ্টায় ভবিষ্যত জনমানসে ধৰ্ম্ম ও কৃষ্টির যে দীপশিখা জ্বলে উঠবে
একদিন—তারই ধারক ও বাহক হবে এই পুত্র। শিশুর নাম রাখা হল অমরেন্দ্রনাথ। শ্রীশ্রীঠাকুর
ডাকলেন—বড়খােকা।
নেপথ্যচারিণী থেকেই শ্রীশ্রীবড়মা এই বড়খােকাকে ধীরে ধীরে বড় করে তুললেন, যােগ্য
করে তুললেন। শ্রীশ্রীঠাকুর বলতেন—“বড়খােকা একটা “সেন্টার অফ পিপল” অর্থাৎ লােকের
আশ্রয়স্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে—আমি বড় খুশি। বড়খােকার এই যে রূপান্তর যা তাকে মানুষের
আশ্রয়স্থলে পরিণত করেছিল, তার পেছনে শ্রীশ্রীবড়মার অবদানটি ছিল সবচেয়ে বড়।
শ্রীশ্রীঠাকুর তার লােকপালী ও ভাগবৎ জীবন নিয়েই বিভাের হয়ে থাকতেন, আর মা মনােমােহিনী
দেবী সদা-সতর্ক হয়ে থাকতেন পুত্রের এই দৈবী ও লােকপ্রিয়সত্তার যেন উত্তরােত্তর বিকাশ লাভ
করে, যেন কোনরকম বাধাপ্রাপ্ত না হয়। তারই মাঝখানে এই বৃহৎ সংসারকে দেখাশােনা করা,
পরিপালন করা, বাস্তবভাবে বহুজনের মুখে অন্নজল তুলে দেওয়া, অনটনের সংসারে কম কথা
নয়। নেপথ্যচারিণী বড়মা যেমন অন্তরালে থেকেই বাস্তব অর্থে সকলের আশ্রয়স্থল হয়ে
উঠেছিলেন, পরবর্তীযুগে শ্রীশ্রীবড়দাও মাতৃসূত্রে এই আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠার ভাবটির উত্তরাধিকারী
হয়েছিলেন। শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে মানুষজন আসে। আর্ত, অর্থাথী লােকের ভিড়ই ছিল বেশি।
সেখানে নানাজনের নানা সমস্যা। বড়মা দূর থেকে তা দেখে এবং অন্তরালে অবস্থান করেও
সবকিছু জোগান দিয়ে যেতেন, যাতে করে ঠাকুরের অসুবিধা না হয়। একবার কথা প্রসঙ্গে
শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন—বড়বৌ-এর মতাে নীরব কৰ্ম্মী পাওয়া খুব কঠিন। ওঠে কত ভােরে,
একটার পর একটা কাজে লেগেই আছে। কিন্তু কোন তড়তড়ানি নেই, হৈ-চৈ নেই। আর, সব
জিনিস এত গােছান এবং সুশৃঙ্খল যে দেখলে অবাক হতে হয়। সংরক্ষণ বুদ্ধি অসাধারণ। তার
কাছে চেয়ে পাওয়া যাবে না, এমন সাধারণ সাংসারিক প্রয়ােজনীয় জিনিস খুব কমই আছে।
অথচ থাকে তাে ঐটুকু জায়গার মধ্যে। আর, জিনিসগুলি তার এমন নখদর্পণে থাকে যে কোনকিছু
চাইলে বােধ হয় চোখ বুজে তা বের করে এনে দিতে পারে।
(সূত্র : আলােচনা-প্রসঙ্গে, একাদশ খণ্ড)
Comments
Post a Comment