Sri Sri Thakur on Sri Sri Boroma
শ্রীশ্রীঠাকুর---সংসারে মেয়েদের বলে লক্ষ্মী। কপালে মানুষ যারা, তাদের বেী লক্ষ্মী হয়। আমার।
গায়ে ভূত ছাড়ায়ে দিতেন। ও চুপ করে থাকতাে, টু শব্দটি করতাে না। বুঝে-বুঝে হাতের কাজ।
কাল ভাল, তাই বড়বৌ-এর সঙ্গে বিয়ে হইছিল। এই বড়বৌ-ই কি কৰ্ত্তামার কাছে কম গাল খাইছে?
২া 'ডে করতাে। তাতে কামা খুব খুশি হতেন। আদর করে খাওয়াতেন। এত সব পাশ করে আসে।
তবে না আজ বড়বৌ বড়বৌ। মেয়েদের বড় University (বিশ্ববিদ্যালয়) হলো তাদের শ্বশুরবাড়ি।।
(সূত্র : আলােচনা-প্রসঙ্গে, তৃতীয় খণ্ড)
*
শ্রীশ্রীঠাকুর—নারীত্বের সার্থকতা মাতৃত্বে। প্রকৃত মাতৃত্বের স্ফুরণ যখন হয় মেয়েদের মধ্যে, তখন।
ইর ভিতর দিয়েও স্বামী মাতৃত্বের স্পর্শ পায়। সন্তানের সুস্থি ও পুষ্টির জন্য মায়ের যেমন একটা
পাগলপারা রকম থাকে, স্বামীর জন্যও তখন তেমন হয়। মা যাওয়া অবধি বড়বৌ-এর মধ্যে এই
জনিসটা আমি খুব বেশি করে দেখেছি। বেশিরভাগ সময় থাকে তাে বাড়ির মধ্যে। কিন্তু আমি দেখি,
তিনটে হাঁচি যদি দিই তাও সে খবর রাখে। হয়তাে খেতে বসেছি, টক খাবাে, বললাে—আজ আর
উক খেয়ে কাজ নেই, বার-বার হাঁচি হচ্ছে যেমন। রকমটা দেখে আমার ভাল লাগে।
(সূত্র : আলােচনা-প্রসঙ্গে, তৃতীয় খণ্ড)
*
পরিবার জীবনের কথা বলতে গিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন—বড়বৌ-এর মত মানুষই দেখিনা, আমার
খুব শ্রদ্ধা হয়। রামকৃষ্ণদেবের স্ত্রী মা ঠাণ যেমন ছিলেন কতকটা সেই ধাঁজের। আমার বিয়ে হয়েছে
সেই আঠারাে বছরে। তারপরে এ পর্যন্ত আমার তার সঙ্গে কোনটা নিয়ে বাধেইনি প্রায়। কার কথামত
বাড়ির ভিতরের গাব গাছটা কেটেছিল, সেইদিন আমার রাগ হয়েছিল। তাছাড়া আমার মনে কোন
ব্যথাই দেয়নি। কংস রাজার খেয়ালের মত কত হুকুম চালিয়েছি, হাসিমুখে সুখে করেছে, সন্তপ্ত হয়ে
নয়। আমি চলে গেলে এর টেকা মুস্কিল, তবে বড়খােকা এত বিবেচক এই যা’ ভরসা। ভগবান করুন
এরা বেঁচে থাকে। সুস্থ থাকে।
(সূত্র ও আলােচনা-প্রসঙ্গে, পঞ্চদশ খণ্ড)
*
**
*
*
শ্রীশ্রীঠাকুর কথা প্রসঙ্গে বললেন—বড়খােকার কাছে যে লােকগুলি থাকে, তারা অনেকখানি
শাসনের মধ্যে থাকে। তাই খানিকটা শায়েস্তা হয়। শাসন বজায় রাখাই ভাল। তা অন্যের বেলায়ও
যেমন, নিজেকেও তেমনি। নচেৎ আস্তে আস্তে গলদ ঢুকে যায়। বাড়বৌ যদি কৰ্ত্তামার কাছে মা
না হ'ত তবে ঐ বড়বৌ হতাে না। কত্তামার গালি কি! মুখে কিছু করতে বলবে না, কিন্তু রাত থাক,
উঠে যখন সে ডােয়া গােবর দিতে যাবে সেই সময় যদি গােবরের হাঁড়ি নাতবৌ হাত থেকে কেড়ে
না নেবে তাে চটে কাই হয়ে যাবে। পান থেকে চুন খসলে ভােরবেলা থেকে চৌদ্দপুরুষ তুলে গালাগালি
শুরু হয়ে যেত। আবার ভালও বাসত খুব। বকে-টকে এসে থপ্ করে পাথরের বাটিতে করে অনেক
কিছু খেতে দিত। না খেলে রেহাই ছিল না। তার বলার ভঙ্গীই ছিল অন্যরকম—হয়তাে বলতাে—
নেও দু’টো খেয়ে আমাকে উদ্ধার করাে।
(সূত্র : আলােচনা-প্রসঙ্গে, অষ্টাদশ খণ্ড)
শ্রীশ্রীবড়দা বললেন—মা বসে আছে। মা-র সঙ্গে কথা ক’য়ে আসি। ব’লে উঠে গেলেন শ্রীশ্রীবড়মার
কাছে। শ্রীশ্রীঠাকুর সেদিকে তাকিয়ে মৃদু-মৃদু হাসছেন। তারপর বলছেন—“ঐ ওর একটা Passion-এর
(প্রবৃত্তির) মত। যে Passion-এর (প্রবৃত্তির) টানে আমি expanded (সংবর্ধিত) হই তা ভাল। আমার
বৌ যদি বৌ-এর মত না হয়, তার যদি love, reverence (প্রীতি, শ্রদ্ধা) না থাকে, সে যদি আমার
কত্রী না হয়, সবদিক না দেখে, তাহলে হবে কী করে? মা যাওয়ার পরে বড়বৌ আমার ঐ-রকম
হয়েছে।
(সূত্র : দীপরক্ষী, চতুর্থ খণ্ড)
শ্রীশ্রীঠাকুর—বড়বৌ-এরও (শ্রীশ্রীবড়মার) ঘুম হয় না। আমার থেকে তার দায়িত্ব যেন বেশি। তার
ঘুম কুকুরের মত (স্বল্পস্থায়ী)। আপনার (কেষ্টদার) কাছে শুনেছিলাম, এ-রকম ঘুম ভাল। আবার ঘরের
কোথায় কী আছে, সব ঠিকমত রেখে দেছে। যখন যেটা চাই, ফক্ করে বের করে দেয়। Out of
necessity (প্রয়ােজনের তাগিদে) ঐরকম হয়ে গেছে। আর, চোখ ঠিক সার্চ লাইটের মত। সব ধরে
ফেলতে পারে। আর একটা জিনিস দেখি বড়বৌ-এর মধ্যে। যে যা পাবে—সে আধ-পয়সাই হােক,
আর এক-পয়সাই হােক—দিয়েই দেবে যত তাড়াতাড়ি পারে। আর অন্যরা দিতেই চায় না।
(সূত্র : দীপরক্ষী, পঞ্চম খণ্ড)
শ্রীশ্রীঠাকুর (সহাস্যে)-মায়েদের রকমই ঐ। এদিকে পেট চিরে খাওয়াবে আর বলবে, খেলে কৈ ?
আমাকে খাওয়াবার বেলায় বড়বৌও অমনি করে। বড়বৌ কাছে বসে যখন খাওয়ায়, তখন টেরই
পাইনা কতটা খেলাম, খাওয়ার পর টের পাই। তাই খাবার সময় বড়বৌ কাছে না থাকলে আমার
খাওয়াই হয় না। বড়বৌ-এর সঙ্গে আমার বিয়ে না হলি আমি গিছিলাম আর কি! আমার হাতে পড়ে
ওকে আজীবন তাফাল কম সইতে হয়নি, কিন্তু ও বরাবর সমানে খুশি, আমার চলার পথে কোন
অন্তরায় তাে সৃষ্টি করেইনি, বরং হাসিমুখে আমার সহায়করূপে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আর,
গিন্নিও বড় পাকা গিন্নি, বড়বৌ যেমন সুশৃঙ্খলভাবে অল্পের মধ্যে সংসার চালায়, অমন আজকাল খুব
কম দেখা যায়। কামার গালাগালই ওকে মানুষ করে দিয়ে গেছে। কৰ্ত্তামার কড়া শাসন ছিল, আবার
ভালও বাসতেন খুব। বাবাও বড়বৌকে খুব ভালবাসতেন। বাবার ধারণা ছিল, আমার ও মার কোন
সাংসারিক-বুদ্ধি নেই। বুদ্ধিমতী বলে বড়বৌ-এর উপর তার আস্থা ছিল খুব। বড়বৌ-এ
-এর সঙ্গে
সাংসারিক ব্যাপার নিয়ে পরামর্শ-টরামর্শ করতেন। বড়বৌ-এর সংরক্ষণ-বুদ্ধি তিনি খুব পছন্দ।
করতেন, আবার বলতেন—তােমার কাছে যদি কিছু থাকে, তা কিন্তু অনুকূলকে বা তােমার শাশুড়িকে।
উঠলেন, সঙ্গে সঙ্গে সবাই উচ্চৈস্বরে হাসতে লাগলেন, হাসতে হাসতে শ্রীশ্রীঠাকুরের ডান চোখ বেয়ে।
জল গড়িয়ে পড়লাে। শেষের দিকের হাসির মধ্যে যেন আনন্দ ও বেদনার একটা মিশ্রসুর ধ্বনিত হয়ে।
(সূত্র : আলােচনা-প্রসঙ্গে, দ্বিতীয় খণ্ড)
কয়াে না, একবার টের পেলে আর রক্ষে নেই। —এই বলে শ্রীশ্রীঠাকুর নিজেই হাে-হাে করে হেসে
উঠলাে।
**
শ্রীশ্রীঠাকুর—সে কী আমি বলতে পারি? সে বড়বৌ জানে। আমি তাে পেলেই মেরে দেব। কী
খাওয়া উচিত, কী খেলে সহ্য হবে, সে বড়বৌ জানে। আমার পছন্দ কী তাও তার জানা আছে। আমার
পেটের অভিভাবক বড়বৌ।
(সূত্র : আলােচনা-প্রসঙ্গে, দ্বিতীয় খণ্ড)
*
*
*
শ্রীশ্রীঠাকুর—একবার বড়বৌ একলা নিজে জল পৰ্য্যন্ত এনে ৩০০-৪০০ লােকের রান্না করেছিল।
তাছাড়া আরও কতবার যে কত কী করেছে তার ইয়ত্তা নেই। ঐ-সব মানুষ যারা অমনিভাবে
educated (শিক্ষিত) হয়ে উঠেছে, তারাই দশের মা হতে পারে। কেবল জোর-জবরদস্তি করে তা
হয় না। ঐ যে একটা কথা আছে। বাঁশের উপর বসলেই যদি মিস্ত্রী হত তবে তাে আর কথা ছিল
। একবার আমাদের বাড়িতে বামুনরা খাচ্ছিল। পরিবেশন করছে একা বড়বৌ। একবার নিয়ে যেতে
যেতে হঠাৎ পড়ে গেল। পরে আমি বড়বৌকে ক’লাম—দেখ, তুমি অত মানুষের মধ্যে পড়ে গেলে,
আমার কিন্তু খুব লজ্জা করছিল। তারপর থেকে আর কোন দিন বড়বৌকে পড়তে দেখিনি, পড়েওনি।
(সূত্র ঃ দীপরক্ষী, তৃতীয় খণ্ড)
কথা প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর বলছেন—Aversion (অনিচ্ছা) যেই আসে সেই attention break করে
(মনােযােগ ছিন্ন হয়)। Attention break (মনােযােগ ছিন্ন) হলেই memory fail করে (স্মরণশক্তি
অক্রিয় হয়ে যায়) বড়বৌ-এর কিন্তু তা হয় না। সব আছে তার। অবশ্য এখন অনেক জিনিস হারায়ে
গেছে। হাঁড়ি-কুড়িগুলাে এখনও এমন সুন্দর করে সাজায়ে রাখে।
(সূত্র : দীপরক্ষী, প্রথম খণ্ড)
*
*
*
শ্রীশ্রীঠাকুর—বড়বৌ-এর সঙ্গে যদি আমার বিয়ে না হত, তবে আমার গােয়র চাম থাকত না।
৪ত
বড়বৌ-এর কথা শুনেছি। আমার মা যখন ওকে দেখতে যান, মাকে দেখেই তার কোলে এসে বসে।
(সূত্র ও আলােচনা-প্রসঙ্গে, একবিংশ খণ্ড)
শ্রীশ্রীঠাকুর—বড়বৌ-এর পড়াশুনাের অভ্যাস আছে খুব। ফাঁক পেলেই পড়ে।
(সূত্র ও আলােচনা-প্রসঙ্গে, তৃতীয় খণ্ড)
*
শ্রীশ্রীঠাকুর—সেইদিন বড়বৌ বলছিল—“তুমি থাকতে মরি, এ আমার কখনও ইচ্ছা হয় না। কারণ,
বিংশ
আমি জানি, আমি চলে গেলে তােমার অশেষ কষ্ট হবে। (সূত্র : আলােচনা-প্রসঙ্গে, বিংশ খন্ড)
*
শ্রীশ্রীঠাকুর প্রাতে বড়াল-বাংলাের উত্তর দিকের বারান্দায় ভক্তবৃন্দ-পরিবেষ্টিত হয়ে তক্তপােষে
শুভ্র শয্যায় সমাসীন। শ্রীশ্রীঠাকুর যেখানে বসেছেন তার পুব দিকে শ্রীশ্রীবড়মার ঘর।
কথা প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন—বড়বৌ-এর মত নীরব কর্মী পাওয়া খুব কঠিন। ওঠে কত
ভােরে, একটার পর একটা কাজে লেগেই আছে। কিন্তু কোন তড়তড়ানি নেই, হৈ-চৈ নেই। আর
সব জিনিস এত গােছান ও সুশৃঙ্খল যে দেখলে অবাক হয়ে যেতে হয়। সংরক্ষণ-বুদ্ধি অসাধারণ।
তার কাছে চেয়ে পাওয়া যাবে না, এমন সাধারণ সাংসারিক প্রয়ােজনীয় জিনিস খুব কমই আছে। অথচ
থাকে তা ঐটুকু জায়গার মধ্যে। আর জিনিসগুলি তা’র এমন নখদর্পণে থাকে যে কোন কিছু চাইলে
বােধ হয় চোখ বুজে তা বের করে এনে দিতে পারে। (সূত্র : আলােচনা-প্রসঙ্গে, একাদশ খণ্ড)
*
*
*
*
আদিনাথদা (মজুমদার) শ্রীশ্রীঠাকুরের স্বার্থের পরিপন্থী একখানি আমমােক্তারনামার লেখক ছিলেন।
আদিনাথদাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় কেন তিনি এমনতর জিনিস লিখেছেন, তাতে তিনি বলেন—
‘আমি সকলকেই সমান মনে করি। খেপুদা ঠাকুরের ভাই, তিনি বলেছেন, তাই লিখে দিয়েছি।”
সকলকে সমান মনে করি’—এই কথায় শ্রীশ্রীবড়মা খুব ব্যথিত হন। তিনি আদিনাথকে তিরস্কার
করে বলতে থাকেন—“ঠাকুর আর ঠাকুরের অন্যান্য সবাই সমান, এই কথায় আমি বড় ব্যথা
পেয়েছি। ঠাকুরের সঙ্গে কার তুলনা? ঠাকুরের বৌ, ছেলে, ভাই বা বােন যেই হােক না কেন, ঠাকুরের
সমান হয়ে যাবে? ঠাকুরের কোন বৈশিষ্ট্য নেই? তবে তার কাছে আসা কেন? আমি তাে প্রায় ৫০
বছর ধরে তার সঙ্গ করছি, ১২ বছর বয়সে এই সংসারে এসেছি, আজ আমার প্রায় ৬০ বৎসর, এই
৫০ বছর তার কাছে থেকেও তাে তাঁর কড়ে আঙ্গুলের যােগ্য হতে পারিনি। তাঁর গুণের কানাকড়িও
পাইনি। তার সঙ্গে কাউকে সমান করতে দেখলে আমার বড় লাগে। তুই বিষয়-সম্পত্তির লেখাপড়া
যা’ করেছিস সেজন্য তাে আমি তােকে কিছু বলছি না। কিন্তু এমন দিব্যজ্ঞান তোর গুলে গেছে, এমন
পরমহংস হয়ে গেছিস তুই, যে সকলকেই ঠাকুরের সমান দেখিস তাতেই তাে আমি অবাক হয়ে।
(সূত্র : আলােচনা-প্রসঙ্গে, একৰি খণ্ড)
গেছি।
}
শ্রীশ্রীঠাকুর রাত ১০-৫০ মিনিটের পর ভােগে বসেছেন। শ্ৰীশ্ৰীবড়মা পাশে বসে যত্ন সহকারে
ভােগের সামগ্রী পরিবেশন করছেন এবং অন্তরঙ্গ ভাবে কথাবর্তা বলছেন।
ভােগে ব’সে রাত ১০-৫৫ মিনিটে শ্রীশ্রীঠাকুর শুধােলেন—প্রফুল্ল আছি নাকি?
হ্যা বলে সাড়া দিতেই শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন—খাতা কলম নিয়ে এদিকে আয়।
কাছে যেতেই শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন—
“যে তােমার হতে চায় না,
কিন্তু তােমাকে তার করতে চায়,
ঠিক জেনাে
রবুদ্ধি তার অন্তরে ওত পেতে বসে আছে,
তােমার সাথে তার খাদ্যখাদক সম্বন্ধ
সে তােমাকে পদানত করতে চায়;
সাবধান!
হিসাব করে চলাে।”
বাণীটি দেওয়ার পর শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন—যারা সুকেন্দ্রিক শ্রেয়ের অনুগত হতে চায় না, বরং
তাকেই নিজেদের মতাে করে চালাতে চায়, তাদের সম্বন্ধে একথা বিশেষভাবে প্রযােজ্য। এরপর বাণীটি
পড়া হলাে।
শ্রীশ্রীঠাকুর বড়মাকে জিজ্ঞাসা করলেন—কি বল ? ঠিক আছে?
শ্রীশ্রীবড়মা—আমি তাে খুব স্পষ্ট বুঝতে পারছি।
শ্রীশ্রীঠাকুর হেসে বললেন—তা’ হলেই হলাে। (সূত্র : আলােচনা-প্রসঙ্গে, চতুর্দশ খণ্ড)
এক ঋত্বিক দাদা শ্রীশ্রীঠাকুরকে দীক্ষা-প্রণামী ২৯২ টাকা আট আনা নিবেদন করায় তিনি তা
শ্রীশ্রীবড়মাকে দিতে বললেন।
উক্ত দাদা শ্রীশ্রীবড়মাকে ঐ টাকা দিতে যাবার পর শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, বড়বৌ খুব মজা করে।
এই সব টাকা যে দেওয়া হয়, আমি হয়ত কুড়ি টাকা শৈল’র খাবার জন্য চেয়ে নিলাম, তখন বলে
অযথা এ টাকাটা খরচ করে কী লাভ? আমি বলি—তুমি যে এত পেলে। তখন বলে—“যা পেলাম,
তা’ পেলাম। কিন্তু এই খরচটায় তুমি কি পেলে? ওকে ঐভাবে খাইয়ে ওর পেট খারাপ করে, তােমার ও
টাকাগুলি যায়। ওরও যদি কোন লাভ হতাে, তাহলে না হয় বুঝতাম।” ওর কথাও ফেলবার মতাে
নয়। বড়বৌ—যেন পােস্ট অফিসের বাক্স। একবার চিঠি ফেলে ইচ্ছামত তা বের করার উপায়
নেই।
(সূত্র : আলােচনা-প্রসঙ্গে, অষ্টাদশ খণ্ড)
***
জনৈকা মা একদিন তার বাড়িতে সৎসঙ্গ দেয়—পরদিন সেই সৎসঙ্গের প্রসাদ ও প্রণামী ১ আনি
আনেন। শ্রীশ্রীবড়মা ভােগের জিনিসটি একজায়গায় রাখতে বললেন ও নিজে প্রণামীর পয়সাটি হাতে
নিলেন। তখন শ্রীশ্রীঠাকুর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। বড়মার হাতে কি জিজ্ঞাসা করায় বড়মা বললেন—
প্রণামীর পয়সা। তখন শ্রীশ্রীঠাকুর পাশের একজনকে বললেন—মনােহরকে ডাক্ তাে, বড়বৌ-এর জন্য
একটা বাক্স করে দেবে। তাতে শ্রীশ্রীবড়মা হাসতে হাসতে বললেন—“আর বাক্সের দরকার নাই
তাতে অচল পয়সা চালাই দেবার আরও সুবিধা হবে—এমনিতেই কত অচল দেয়! যদিও বড়মা রহস্য
করেই বলেছিলেন কথাটি।
আর একবার জনৈকা বৃদ্ধা মা ঠাকুর-ভােগের কিছু জিনিস এনে বলেন, বৌমা এগুলাে ঠাকুর-ভােগে
দেবে। তখন শ্রীশ্রীঠাকুরও কাছে চেয়ারে বসেছিলেন। বড়মা তার ও-কথা শুনেই তড়িৎ উঠে এসে
রােষায়িত বাক্যে বললেন—“তাের কোন ব্যাটার বৌ আমি রে! তাের কোন্ ব্যাটার বৌ? এতে সেই
মা-টি সম্বিত পেলেন। বড়মা ঐ দুটি বাক্য বলেই চুপ করেন, ঠাকুরও কিছু বলেননি।
বড়মাকে কখনও রাগতে দেখিনি—মাত্র একবার একজনকে বলতে শুনেছিলাম। তিনি একজনকে
বলছেন—“তুই যেমন আমাকে জ্বালাতন করছি—তাের কখনও শান্তি হবে না—জন্মে-জন্মে তুইও
কষ্ট পাবি। অবশ্য বড়মা তাকেও ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, তাকে নিয়ে চলেছেন।
(সূত্র ঃ শ্রীশ্রীবড়মার সংসার—সুপ্রভা দেবী)
Comments
Post a Comment