Skip to main content

শৈশব ও বাল্যকাল

শৈশব ও বাল্যকাল

Sri Sri Boroma home prisoned

ফটুকি রইল তার দিদিমার কাছে মামাবাড়িতে। আর ত্রিনয়নী দেবী ছেলেকে নিয়ে চলে গেলেন
শ্বশুরবাড়িতে। দিদিমার চোখের মণি সে। মামার বুকের ধন, আর মামিমার আদরের দুলালী।
তােড়া পরিয়ে দেন দিদিমা নাতনির ছােট রাঙা দুটি পায়ে। গলায় দুলিয়ে দেন সরু একটি বিছে
হার। আর পদ্মের উঁটার মতাে হাতদুটিতে দুটি মকরমুখী বালা, কানে ঝুলিয়ে দেন ছােট ছােট
দুটি কুমারী মাকড়ি। দিদিমার কাছে সে শােনে রাজপুত্র রাজকন্যার গল্প, মামার কাছে শােনে
রাবণ রাজার গল্প, আর মামিমার সঙ্গে তেঁতুলবীচি নিয়ে জোড় বিজোড় খেলে। সকালবেলা
দিদিমা চেঁকিতে কোটা লাল আতপচালের ভাত, একটু ঘি ছড়িয়ে আলুভাতে দিয়ে খাইয়ে দেন।
তারপর ফটুকি হাটে কেনা নীলাম্বরী শাড়িখানি কোমরে জড়িয়ে ঝমঝম শব্দে মল বাজিয়ে মৈত্র
বাটীর দোরগােড়ায় এসে সখী নিরুকে ডেকে নেয়। কুমির কুমির খেলার মহড়া চলে সারা সকাল
ধরে। বেলা বেড়ে উঠলে মামিমা খুঁজে নিয়ে জোর করে বাড়ি নিয়ে আসে, পরে মামার পাশে
বসে খেয়ে দুপুরের ঘুম। এইভাবেই চলছিল ফটকির শৈশবের দিনযাপন। ফটকি, নিরু ও টুলু
একসঙ্গে মিলিত হয়েছে নিরুদের বাড়িতে। তেল নুন দিয়ে আম খাবার প্রস্তুতি। হঠাৎ মামির
আবির্ভাব। খপ করে ফটকিকে তুলে নিয়ে বাড়ি এসে দিদিমার কাছে দিতেই মেয়েকে দেখে
দিদিমার চক্ষু চড়কগাছ। বুক পিঠ লাল টকটকে হয়ে গেছে। দুধসাগরে যেন রক্তের ঢেউ। মামা।
বাড়ি ফিরে সব দেখে ভাগ্নিকে কোলে নিয়ে তে-রাস্তার মাথায়। কিসব মন্ত্র পড়লেন, কাপড়টা।
খুলে আগুন ধরিয়ে দিলেন, প্রতিবেশীনীর মন্দ অভিপ্রায়, দুষ্ট বাসনা, অসৎ উদ্দেশ্য সবকিছুকে।
ছাই করে ভাগ্নিকে কোলে নিয়ে ডুব দিয়ে এলেন পুকুর থেকে, নারায়ণের পুজো সারলেন;
চরণামৃত খাইয়ে দিলেন, ভাগ্নির মাথায় ছোঁয়ালেন পুজোর নির্মাল্য। বেদমন্ত্রের উচ্চারণে শাতি
স্বস্ত্যয়নের ব্যবস্থা হল বাড়িতে। সন্ধ্যেবেলা হল হরিনাম সংকীর্তন। বাড়িতে বন্দী হল ফটকি।
শেষ হল পাড়া বেড়ানাে। দিদিমা ও মামিমার নজরবন্দী হল পুনরায় ।

Sri Sri Boroma Shiv Puja

এবার ফকির অন্য জীবন। শৈশব থেকে বাল্যকাল। দিদিমা শিবপূজা করেন। শিবের মাথায়
জল না ঢেলে, বিল্বপত্র না চাপিয়ে তিনি জলস্পর্শ করেন না। এবারে ফটকিকে অন্য জগতে
নিয়ে যাওয়ার জন্য তার হাতে শিবপূজার ভার অর্পণ করলেন। শিখিয়ে তুললেন শিবপূজার
প্রতিটি খুঁটিনাটি—ফুল তােলা, চন্দন বাটা। দিদিমা দেখে আশ্চর্য হলেন যে অতটুকু মেয়ের
কি আন্তরিক যত্ন শিবপূজার কাজে। উষাকালে শয্যাত্যাগ করে দিদিমার সঙ্গে সঙ্গে তার রাঙা
চেলিটি পরে সাজিটি হাতে নিয়ে বাগানে গিয়ে ডাল নুইয়ে স্থলপদ্ম, বেলফুল, ধুতুরা ফুল আহরণ
করে কুমারী ফকি। তার সঙ্গেই বেলপাতা, তুলসী ও দুর্বা একটি একটি করে বাছাই করে সাজি
ভরিয়ে তােলে। তারপর ঠাকুরঘরে বসে দিদিমার কাছে শেখা শিবঠাকুর গড়ে নিপুণ হাতে।
দিদিমা চেয়ে চেয়ে দেখেন।
লক্ষ্মীমা’ গ্রন্থে একটি সুন্দর বর্ণনা রয়েছে—“চোখ ফেরে না তার। গর্বে বুক ভরে ওঠে
খুশীর জোয়ার উপচে পড়ে হৃদয়ের দু’কুল ছাপিয়ে। কী যেন ভবিষ্যতের ইঙ্গিত পান তিনি।
ভবিষ্যতের নিশানা। বালিকা উমার সাদৃশ্য মেলে তার স্নেহের দুলালীর মধ্যে। গিরিকন্যা উমার
ধ্যানস্তিমিত মূৰ্ত্তির দর্শন পান তিনি রক্তবসনা, সর্বসুলক্ষণা, সুশােভনা নাতনির মূৰ্ত্তিতে। আনন্দে
আত্মহারা হন। মনে মনে প্রণতি জানান ইষ্টদেবের চরণে।”
(পৃঃ ৬৫)
নাতনির খুব যত্নে গড়া মৃত্তিকার শিবমূর্তি দেখে তৃপ্তি ও মাধুর্যে মনটি ভরপুর হয়ে যায়
দিদিমার। এর মধ্যে থেকেই যেন তিনি পেয়ে যান ধ্যানরতা গিরিকন্যা উমার তপস্যার রূপ।
অনুধাবন করেন স্বয়ং উমাই যেন গিরিকন্যা রূপ ধরে ফটকির মধ্যে নবজন্ম লাভ করেছে। এ
যুগের তপস্যারত মহাদেবের ধ্যানভঙ্গের জন্য এবার তার মােহিনী রূপ দর্শনে ধ্যানভঙ্গের আর
প্রয়ােজন হবে না। এবার স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব স্ব-ইচ্ছায় তাকে ধারণ করবেন, ধ্বংসের
উন্মাদনায় নয়, সৃষ্টি মঙ্গলের নব উল্লাসে।

Sri Sri Thakur and Boroma First Seeing

মেয়ে বড় হয়েছে, নাম তার সরসীবালা। মহাসরােবরের মতােই গম্ভীর ও স্থৈর্যপূর্ণ তার
জীবনের সূচনা। পিতা রামগােপাল ভট্টাচার্য্য এহেন কন্যারত্ন লাভ করে পরম তৃপ্তিতে ভরপুর
হয়ে ওঠেন। উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের যে সাগরতরঙ্গ তার দু-একটি ক্ষুদ্র ঢেউ
পৌঁছে গেছে বাংলার গ্রামে গ্রামে। তিনি চাইলেন কন্যাকে সেইভাবে শিক্ষা দিতে, যাতে তিনি
স্বনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠতে পারেন। তাই নিজ হস্তে কন্যার শিক্ষাভার গ্রহণ করলেন। কন্যার অসাধারণ
মেধা শক্তিতে তিনি গর্বিত ও আনন্দিত। এর মধ্যেই দুটি ঘটনা ঘটল। ত্রিনয়নী দেবী যাবেন
কুটুম বাড়ি ছেলেমেয়েদের নিয়ে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে। ফটকি যাবে তার মায়ের সঙ্গে নিমন্ত্রণ
খেতে হিমাইতপুর গ্রামে। অলক্ষ্যে নিয়তি হাসেন। যজ্ঞী বাড়ি, কাজের অন্ত নেই; লােকজন
আত্মীয়-কুটুমে বাড়ি ভরপুর। ফটকি ঘুরে বেড়াচ্ছে মায়ের পিছু পিছু ছােট ভাইটিকে কোলে
নিয়ে। ঐ বাড়ির গিন্নীমা একসময় ত্রিনয়নী দেবীকে এসে বলল, চলাে মা ছেলেমেয়ে দুটিকে
কিছু খাইয়ে আনবে চলাে। পাশেই শিবচন্দ্র চক্রবর্তীর বাড়ি বর্ধিষ্ণু গৃহস্থ তারা। তার শাশুড়ি
কুসুন্দরী দেবী সকালবেলা উঠে আতপ চালের ফেনাভাত রাঁধেন এক হাঁড়ি। ঘরে জ্বাল দেওয়া
ঘি দিয়ে সেই ভাত তিনি খাওয়ান নাতি-নাতনিদের। সেখানে গিয়ে দাঁড়ালেন চৌধুরী বাড়ির
গৃহিনী, ত্রিনয়নী দেবীকে সঙ্গে নিয়ে। কবসুন্দরী দেবী তখন খাওয়াচ্ছিলেন নাতিদের। তিনি
মুখ তুলে চাইতেই চৌধুরী গৃহিনী তার আগমনের হেতু ব্যক্ত করতেই কৃষসুন্দরী দেবী ফটকির
দিকে তাকিয়ে বললেন, দাও ওকে বসিয়ে তানুকূলের সঙ্গে। ওর সঙ্গে বসুক ও। একেবারে
হয়ে যাবে। ত্রিনয়নী দেবী চাইলেন সেই বালকটির দিকে চোদ্দ-পনেরাে বছরের স্বাস্থ্যবান বালক।
লক্ষ্মীনা’ গ্রন্থের বর্ণনায়—“সারা দেহে নিটোল স্বাস্থ্য । এমত। সৰ্ব্ব অঙ্গে লাবণ্যের দ্যুতি। উজ্জ্বল
গৌরবর্ণ, গােলাপী আভায় সজল। নিটোল দেহকাতি। প্রশস্ত বক্ষ, ক্ষীণ কটি—আজানুলম্বিত
বাহু। অপূৰ্ব্ব শ্রীমান বালক। রঙের ঔজ্জ্বল্যে, দেহের লাবণ্যে, বদনের সুষমায় এক অপরূপ নয়ন
বিমােহন মাধুরী বিকাশ করে বসে খাচ্ছে বালক। চাপার কলির মতন শুভ্র ও পরিপুষ্ট
আঙ্গুল নেড়ে খেয়ে চলেছে।” দিদিমার মন্তব্যে চোখ তুলে সামনে চাইল; আকর্ণ বিস্তৃত গভীর
কালাে চোখে চেয়ে প্রশান্ত দৃষ্টিতে তাকাল কৌতুহল ভরে। তার দৃষ্টি পড়ল ফটকির দিকে।
চারটি চোখের তারা স্থির হল উভয়ের দৃষ্টি বিনিময়ে। ঠিক সেইসময় পাশের উপনয়ন বাড়ি
থেকে উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি বেজে উঠল সেই শুভ মুহূর্তে। সেদিন যে ঘটনাটি ঘটেছিল, তার
একটু বিস্তৃত বিবরণ তুলে দেওয়া হল। –“ত্রিনয়নী দেবী সবিস্ময়ে চেয়েছিলেন বালকের মুখের
দিকে। এত রূপ তিনি দেখেন নাই পূৰ্ব্বে, চেয়েছিলেন অবাক চোখে। কৃষ্ণসুন্দরী দেবী বলে
উঠলেন আবার, ‘দাওনা বাছা, তােমার বড় মেয়েটিকে আমার বড় নাতি অনুকুলের সঙ্গে বসিয়ে।
তাড়া দিলেন গৃহিণী। মাতা টানলেন কন্যার বাহু ধরে। তড়াক করে লাফিয়ে উঠল বালক।
উঠে দাঁড়ালাে থালা ছেড়ে। স্তকিত কৃষ্ণ কেশের রাশি ঝেকে উঠলাে মাথায়। ঘাড় বেঁকিয়ে
বললাে বালক, ‘মেয়েমানুষের সঙ্গে খাব না আমি। দাঁড়ালাে গোঁজ হয়ে। কৌতুক বােধ করলেন
দিদিমা। হেসে ফেললেন ফিক্‌ করে। না, খাবিনে বইকি? দাঁড়া, ঐ মেয়ের সঙ্গেই তাের বিয়ে
দেব আমি। আনবাে ওকেই তাের বউ করে।' অপাঙ্গে একবার চেয়ে দেখলাে বালক। চাইলাে
একবার বালিকার লাজরক্ত আনত মুখের দিকে। ‘ধ্যেৎ' বলে এক লাফে বেরিয়ে গেল সে
ঘর থেকে। ছুটে পালিয়ে গেল বাইরে। বিদ্যুৎ যেন চমকে গেল হঠাৎ। চমকে হারিয়ে গেল
আকাশের বুকে। ত্রিনয়নীর দৃষ্টি বালকের পেছু ধাওয়া করল। হেসে উঠলেন গৃহিণী দুইজন
গৃহাভ্যন্তরে।”
(সূত্র : লক্ষ্মীমা’, পৃঃ ৯৫-৯৬)

Sri Sri Thakur and Sri Sri Boroma

এর পরের একটি ঘটনা—পাবনার বাসায় ফিরে আসার দিন স্থির হয়েছে ত্রিনয়নী দেবীর।
দিন চারেক রইলেন বােনের বাড়ি। গাড়ি আসবে বেলা পড়লে। ত্রিনয়নী দেবী গােছগাছে মন
দিয়েছেন। ফটুকি ঘুরে বেড়াচ্ছে আপন মনে এদিক ওদিক। বেলা পড়ে এসেছে, রােদের তেজ
নেই। ফটুকি বাড়িটাকে একটু ঘুরে ফিরে দেখছেন। বাড়ির বাইরে এসে হঠাৎ তার নজরে পড়ল,
সামনের পেয়ারা গাছের মগডালে চক্রবর্তী বাড়ির ছেলেটি বসে, একডালে হেলান দিয়ে অন্য
ডালে পা ছড়িয়ে নিশ্চিন্ত মনে পেয়ারা চিবােচ্ছে। গাছের তলায় দু’তিনটি ছেলেমেয়ে জড়াে
হয়েছে পেয়ারা পাওয়ার লােভে। মাঝে মাঝে কয়েকটা পেয়ারা ফেলে দিচ্ছে নীচে। হঠাৎ
ফকির পায়ের কাছে একটি টলটলে ভঁসা পেয়ারা এসে পড়ল। নেচে উঠল বালিকার চোখ
দুটি— ‘লক্ষ্মীমা’ গ্রন্থে এই ঘটনার মন্তব্য করা হয়েছে—“বালক করলাে ফল-দান। বালিকা
করলাে তা আঁচল পেতে গ্রহণ। সার্থক হল বিধির বিধান। নিয়তি মুখ টিপে হাসলেন।”

Comments

Popular posts from this blog

Tumi Jemon Kore Chalate Chao Lyrics

Tumi Jemon Kore Chalate Chao Lyrics    Tumi Jemon Kore Harmonium Tutorial Tmi jmn kre chalate Chao chalte pri na Mnr majhe Nitya jge Hajar bahana. Tmr kache peye peye Kate amr Bela Kichui to hay hayna kra sudhui abahela. Tmr chinta kmn kre rakhbe Amy urddhe dhare Ami to hay tmn kre chalte prina. Tmr mnr Mata kre Dayal Amay nao kre Chaluk bisva bhuban jure chaoya haoyar khala. Dhana Dhanya Lyrics

Dhana Dhanya Lyrics

 Dhana Dhanya Lyrics Dhana Dhanya Harmonium Tutorial Bengali: ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি ও সে সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি। চন্দ্র সূর্য গ্রহতারা, কোথায় উজল এমন ধারা কোথায় এমন খেলে তড়িৎ এমন কালো মেঘে তার পাখির ডাকে ঘুমিয়ে উঠি পাখির ডাকেজেগে। এত স্নিগ্ধ নদী কাহার, কোথায় এমন ধুম্র পাহাড় কোথায় এমন হরিত ক্ষেত্র আকাশ তলে মেশে এমন ধানের উপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে। পুষ্পে পুষ্পে ভরা শাখি ...

Praner Thakur Sri Anukul Lyrics

Praner Thakur Sri Anukul Lyrics Praner Thakur Sri Anukul Harmonium Tutorial   প্রাণের ঠাকুর শ্রী অনুকূল তুমি জীবের মূল আমার অনুকূল তোমার পূজা করবো বলে তুলেছি ফুল ঠাকুর অনুকূল আমার শ্রী অনুকূল।। এসো হে দয়াময় অনুকূল তুমি ছাড়া এ সংসারে সবই দেখি ভুল তুমি নিজ গুনে কৃপা করে দাও চরণযুগল প্রাণের ঠাকুর শ্রী অনুকূল ..... হৃদমাঝারে দাঁড়াও এসে ও হরি তোমার পূজা করবো নিষ্ঠা ভক্তি ভরি আমার নয়ন জলে ধুয়ে দেব চরণ কমল প্রাণের ঠাকুর শ্রী অনুকূল ...... গৌতম বলে মায়ার খেলা কতকাল কৃপা দৃষ্টি দিয়ে কাটো ভয় মায়াজাল আমার পিঞ্জিরায় ওই পাখিটি আজ হয়েছে ব্যাকুল প্রাণের ঠাকুর শ্রী অনুকূল.... Hathat Jere Ghor Legeche Lyrics

Buy Your Favourite Satsang Books