![]() |
Sri Sri Thakur and Engineer |
সে আজ অনেক দিনর কথা। বেলিয়াঘাটায় হরিহর গাঙ্গুলী নামে এক ভদ্রলোক আমার সঙ্গে পাবনায় শ্রীশ্রীঠাকুরকে দর্শন করতে এলেন।কিছুদিন আশ্রমে থাকার পর হঠাৎ শ্রীশ্রীঠাকুর একদিন তাঁকে ডেকে জিজ্ঞাসা করেন,--দাদা আপনি কি কাজ করেন?
----উত্তরে ঐ ভদ্রলোক বললেন যে, তিনি মার্টিন কোম্পানিতে ৫০০ টাকা বেতনে ড্রাফটসম্যানের কাজ করেন।
শ্রীশ্রীঠাকুর তখন বললেন---- এ কাজ কি পাবনায় পাওয়া যায় না?
--হরিহরবাবু বললেন, জেলা বোর্ডে এ কাজের জন্য লোক দরকার হতে পারে।একথা শুনে শ্রীশ্রীঠাকুর আমাকে ডেকে বললেন----- ইঞ্জিনীয়ার সাহেবের সঙ্গে তো আপনার জানাশোনা আছে দাদাকে নিয়ে একবার তাঁর কাছে যান।যদি এখানকার কাজটা হয়ে যায়।
শ্রীশ্রীঠাকুরের আদেশে আমি হরিহরবাবুকে আমাদের ইঞ্জিনীয়ার সাহেবর কাছে নিয়ে গিয়ে আমাদের কথা বললাম।কথাটা শুনে ইঞ্জিনীয়ার সাহেব বললেন----- আমাদের এখানে একটা কাজ আছে বটে, তবে আমরা দেড়শো টাকার বেশি দিতে পারব না।উনি কলকাতায় ৫০০ টাকা বেতনের কাজ ছেড়ে এই জঙ্গলে মরতে আসবেন কেন? তা'ছাড়া কলকাতায় ওঁর মাইনে আরও বাড়তে পারে।
আমরা ফিরে এসে ইঞ্জিনীয়ার সাহেবের কথা ঠাকুরকে জানালাম। তিনি তখন হরিহরবাবুর কাছে জানতে চাইলেন তাঁর পরিবারে পোষ্য কয়জন।
---তার উত্তরে হরিহরবাবু বললেন, মোট চারজন।
শ্রীশ্রীঠাকুর তখন বললেন----- দেড়শো টাকায় এখানে চারজনের বেশ চলে যাবে। আপনি কালই কলকাতায় ফিরে আপনার পরিবারবর্গকে নিয়ে আসুন।
হরিহরবাবু পরের দিন কলকাতায় রওনা হয়ে গেলেন।কলকাতার চাকরী ছেড়ে পাবনায় চাকরী করতে যাবার কথা শুনে আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব সবাই বলতে লাগল যে হরিহরবাবুর মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
যাই হোক শেষ পর্যন্ত হরিহরবাবুর আর পাবনায় আসা হয়নি।এই ঘটনার ছয় মাস পর হরিহরবাবুর একদিন কঠিন রোগ হল, Galloping pthisis। ডাক্তারী পরীক্ষায় জানা গেল বাঁচার আশা নেই। তখন হরিহরবাবুর নিজের অবস্থার কথা জানিয়ে ঠাকুরকে একটি চিঠি লেখেন।
-------উত্তরে শ্রীশ্রীঠাকুর লেখেন, দাদা সময় থাকতে তো আর এলেন না, এখন যখন সব শেষ সবই হাতের বাইরে চলে গেছে তখন আসতে চাইছেন।এখন আর কি করা যায়।যাই হোক এখন পরমপিতাকে মনেপ্রাণে স্মরণ করুন।
এই ঘটনার মধ্যে আশ্চর্যের কথা এই যে, অন্তর্যামী ঠাকুর তাঁর অলৌকিক শক্তি দ্বারা হরিহরবাবুকে দেখেই তাঁর পরিণতির কথা বুঝতে পেরেছিলেন।হরিহরবাবু যদি শ্রীশ্রীঠাকুরের কথামতো পাবনায় চলে আসতেন তাহলে তখনকার মত তাঁর মৃত্যুকে ঠেকান যেত।
Extra:
অতুলদা-- অদীক্ষিত অবস্থায় নাম করা ও দীক্ষত হ'য়ে নাম করা-- এই দুইয়ের তফাৎ কী ?
শ্রীশ্রীঠাকুর - প্রফেসরের কাছে পড়েছেন, বইও পড়েছেন, বই'তেও সব লেখা আছে, কিন্তু কত তফাৎ! আচার্য্য বা ঋত্বিক্ নাম দেন আর সেই সঙ্গে impulse (প্রেরণা) দেন। এর ভিতর-দিয়ে সঞ্চারণা হয়। জীবন্ত কোন মানুষের ভিতর দয়ার প্রকাশ দেখে তদনুযায়ী ভাবা, বলা ও করা যদি যায়, তবে তার ভিতর-দিয়ে দয়া আয়ত্ত হয়। সবই গুরুগম্য। বই মানুষ নয়, বই কতকগুলি লিপি, সেগুলি একটা intellectual idea (বুদ্ধিগত ধারণা) দেয় কিন্তু ঐ idea- গুলি-সম্পর্কে একটা living impulse (জীবন্ত প্রেরণা) আমাদের ইন্দ্রিয়গোচর হয় না।
আঃপ্রঃ, ৬ খন্ড, বুধবার, ২৬/১২/১৯৪৫, পৃঃ ২১৩
প্রার্থনা
দয়াল আমার! প্রভু আমার!
বিভব-বিভূতি সত্তা!
বিভূ আমার! পাতা আমার!
ধৃতি-দীপনী গােপ্তা!
তাড়ন-পীড়ন যা’ কর তুমি
অনাহারে বা উপহারে রাখ,
তাকাও কিনা আমার দিকে
কিংবা ঘৃণার চক্ষে দেখ,
যা'ই কর না তুমি আমায়
আমি তােমার চিরদিনের,
তােমার সেবাই আমার ধর্ম্ম,
তােমার কাজই আমার তপের;
স্বার্থ আমার তুমিই শুধু
কোন প্রয়ােজন স্বার্থ নয়,
ভরদুনিয়ায় যা' হােক না হােক
তােমার অতৃপ্তিই করি যে ভয়;
তুমি আমার যেমনতর
যেমন করলে ভাল হয়,
তেমনি করেই তুমি থাক
বেঁচে থাক সহ জয়;
তােমার সেবা, তােমার কৰ্ম্ম,
তােমার ধৰ্ম্ম, নীতিস্রোত,
সেইগুলিরই শুশ্রুষা-সেবা
আমার সত্তাধৰ্ম্ম হােক্,
তােমার তৃপ্তি, স্বস্তি, পােষণ
বিশ্বে তােমার জয়গান,
'তাই-ই যেন হয় সাধনা
তা'ই হােক আমার অভিযান;
আশীৰ্বাদ কর—তুমি থাক,
বেঁচে থাক চিরদিন,
আমি তােমার সেবক হয়ে
থাকিই যেন অনুদিন;
ছল করে যা'রা ভালবাসে
পুষে রাখে গাফিলতি,
কথা-ভাবা-কাজে যা'দের
নাইকো নিষ্ঠা-অনুগতি,
দয়ার লাখ ভর্ৎসনা কি
তাদের স্পর্শ ক'রে থাকে?
সৰ্ব্বসত্তায় যাদের তুমি
তা’রাই উপভােগ করে তােমাকে;
‘তুমি ক'রে দাও’ চাই না আমি
তােমায় ভালবাসি ব'লে,
হৃদয় উতল ভালবাসা
তােমার পায়ে পড়ুক ঢলে,
তােমার ইচ্ছা করতে পূরণ
নিটোল চলায় চ'লতে পারি,
মন, বিবেক আর শরীর দিয়ে
দেখতে-শুনতে-বুঝতে পারি;
এই তাে আমার চাহিদা প্রভু!
এই-ই আমার জীবন-চলন,
আগল-ভাঙ্গা এই হৃদয়ে
রহুক অটল তােমার আসন;
শাসন-বাক্য তােমার যেসব
সেই-তাে আমার আশীর্বাদ,
অটুট চলায় চ'লে আমার
যাক্ ছুটে যাক্ সব বিষাদ,
এই দয়াতে তুমি যখন
উতাল ক'রে তোল আমায় -----
সেই তাে তুমি,—এই তাে তুমি,
ঐ যে তুমি, ---বলি তােমায়;
নিজের, নিজ পরিবারের
ব্যষ্টি সহ পরিবেশের
পালন-পােষণ, ----হয়ই যেন
শ্রেষ্ঠ নীতি এই জীবনের,
তােমার দৃষ্টি মিষ্টি হ'য়ে
সৃষ্টিটাতে ছড়িয়ে পড়ুক,
তােমার সেবা, স্বস্তি, পােষণ
অন্তরে মাের দীপ্ত থাকুক ;
তােমাতে আমার হৃদয়-বাঁধন
অটুট হ'য়ে উর্জ্জনায়
দক্ষ হউক, ক্ষিপ্র হউক
অসং যা’ তা'র বর্জনায়;
নিষ্পদনা উর্জ্জী কর্ম্মে
হউক ক্ষিপ্র, উঠুক জেগে,
নির্ভুল চলা দ্যুতি-বিকিরণায়
অটুট সন্ধানে চলুক বেগে;
তােমাতে নিষ্ঠা-অনুগতি-কৃতি
থাকুক হৃদয়ে অটুট হ'য়ে,
অসুয়া সকল নাশিয়া-ধ্বসিয়া
সাত্বত পথে চলুক ব’য়ে;
ভক্তি আমার তােমার দয়াকে
আনুক উছল ভজনায়,
‘গুরুজয়’ বােল প্রতিটি শিরায়
জাগিয়া থাকুক বােধনায়;
জানা-অজানা সমান তােমার
বিজ্ঞই তােমার সত্তা,
তুমি যে আমার, সব যে তােমার,
তুমিই স্বস্তিমত্তা;
অপূৰ্ব্ব যে তুমি, ----
যখন দেখি তােমা
কাছে থাক তুমি যখনই,
তুমি ছাড়া আর
কে আছে কাহার!
হৃদয় তবুও বােঝেনি;
জানে না সবাই
সবারই যে বিভু
তুমি যে অতুলনীয়,
সত্তা সবার
সবই যে তােমার
আর কোথা কে দ্বিতীয়?
Comments
Post a Comment