![]() |
Alochana Prasange 5 th Part |
যোগেশদা (চক্রবর্ত্তী)---আজকাল একদল সমাজ-সংস্কারক দেখা যায়, যারা মনে করেন, পাশ্চাত্যের মত আমাদের দেশেও বিবাহ-বিচ্ছেদের অধিকার থাকলে নারী-সমাজের প্রতি সামাজিক ন্যায়-বিচারের পরাকাষ্ঠা দেখানো হবে। তাই, এ অধিকার স্বীকৃত হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
শ্রীশ্রীঠাকুর (ক্ষোভের সঙ্গে) ওরা যা' ক'রে পস্তাচ্ছে, আমাদের তা' না করলে চলবে কেন ? যেগুলি আমাদের সমাজের পক্ষে গৌরবের, সেইগুলি নিয়ে আমরা বিব্রত ও লজ্জিত বোধ করি, এটা যে কতখানি অন্তঃসারশূন্যতা ও অদূরদর্শিতার পরিচায়ক তা' ব'লে শেষ করা যায় না। বিবাহ-বিচ্ছেদপ্রথা যদি চালু হয়, তার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। পরিবারে ও সমাজে এখনো যে সুখ-শান্তিটুকু আছে, তা আর থাকবে না। পুরুষ ও নারী যাতে সুস্থ থাকতে পারে, স্বস্থ থাকতে পারে, আত্মস্থ থাকতে পারে, তৃপ্ত থাকতে পারে এবং স্ব-স্ব সহজাত সংস্কার-অনুযায়ী জীবনসংগ্রামের সব ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য ক'রে সত্তাকে আপূরিত ক'রে চলতে পারে, সেই দাঁড়াটাই নষ্ট হ'য়ে যাবে। নারীর সতীত্ব বিদায় নেবে চিরদিনের জন্য। অচ্ছেদ্য-প্রীতি-বন্ধনের বদলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আসবে সন্দেহ ও অবিশ্বাস। কেউ নিজেকে নিরাপদ মনে করবে না। কাম-লালসাই হবে পরস্পরের বন্ধন এর একমাত্র সূত্র। পরস্পরকে স'য়ে-ব'য়ে সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন, পরিবার-পরিবেশ সকলের প্রতি মমতাবদ্ধ হ'য়ে সারাজীবন মিলিত সত্তা নিয়ে সংসার করার পরিকল্পনা উবে যাবে, তাই, ভালবাসা শিকড় গাড়ার সুযোগ পাবে কম। কারণ, পারস্পরিক বাস্তব অনুকম্পার ভিতর-দিয়ে যে স্বতঃস্বেচ্ছ প্রীতি সহজ হ'য়ে ওঠে, তার ভিত্তিই যাবে আলগা হ'য়ে। সামান্য দুঃখ, দারিদ্র, মনোমালিন্য, সঙ্কট ও সংক্ষোভের সময় মনে হবে বিবাহ বন্ধন থেকে নিষ্কৃতি পাবার কথা। এককথায়, ভালবাসা, শ্রদ্ধা ও প্রীতির আপ্রাণ উন্মাদনা,যা' অন্তঃকরণকে সুসংস্থ ক'রে সুসন্দীপনায় স্ত্রী-পুরুষের সত্তাকে ঐক্যসম্বন্ধ ক'রে তোলে, তার কর্ম্ম তো নিকেশ হ'তেই থাকবে ; তাছাড়া, এমন দিনও আসতে পারে, যখন হয়তো মানুষ জানবে না, কেউ তার মা আছে বা স্ত্রী, কন্যা, ভগিনী ইত্যাদি ব'লে কেউ আছে। স্নেহপ্রীতির বন্ধন বা আশ্রয় ব'লে কারও কিছু থাকবে না। সেদিন বাওরার মত হতাশ-বুকে পথে-পথে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া তার আর কী করণীয় থাকবে বুঝতে পারি না। লোকসমাজে থেকে সমৃদ্ধির দিকে সুচেতন হ'য়ে সব বাধাবিঘ্নকে অতিক্রম ক'রে সাঁতার কেটে চলাই কঠিন হ'য়ে উঠবে। কারণ,অন্তঃকরণে একটা স্থির অভিনিবেশ বদ্ধমূল হ'য়ে উঠবে, তার আপনার বলে কেউ নেই---পৃথিবীর বুকে সে নিছক একা। আজকে যে তার স্ত্রী, কাল সে অন্যের স্ত্রী,আজকে যে একজনের মা, কাল সে তার পিতা ছাড়া অন্য পুরুষের ছেলের মা। আজকে যে গৃহিণীকে অবলম্বন ক'রে গৃহস্থালী উচ্ছল হ'য়ে চলছে, তা' চলতেই পারবে না। সে হয়তো হবে অন্যের স্বার্থসম্ভোগের ক্রীড়নকমাত্র।এইভাবে জীবনের স্থায়িত্বের সুসংস্থ কাঠামোটা চুরমার হ'য়ে ভেঙ্গে পড়বে। ভাল যারা আছে, তারাও পরিবেশের ঐ প্রভাবে সংক্রমিত হ'য়ে উঠবে। অনেকেই এই আবহাওয়ায় প'ড়ে বিবেককে ভোঁতা ক'রে ওরই সমর্থন ক'রে চলতে সুরু-করবে, ফলে উচ্ছৃঙ্খল-বিশৃংখলা সমস্ত রাষ্ট্রকে, সমাজকে, পরিবার ও পরিবেশকে শাসন করতে থাকবে। তাদের সুনিয়ন্ত্রিত করবার, সংবর্ধনায় সন্দীপ্ত করবার কেউ থাকবে না। দুর্নীতি দোর্দ্দণ্ড প্রতাপে আধিপত্য করতে থাকবে দেশের উপর। এর ভিতর-দিয়ে যেসব জাতকের আবির্ভাব হবে, তারাও হবে সম্বর্দ্ধনবিরোধী।আবার পিতামাতার দাম্পত্যজীবন ব্যতিক্রমদুষ্ট হওয়ার ফলে সন্তান-সন্ততির মস্তিষ্ক বিকৃতি, ব্যতিক্রমী চিন্তা, চলন, বিধ্বস্ত, ছেদপ্রবণ ব্যক্তিত্বের বহুল আবির্ভাব হতে থাকবে, সত্তাবিরোধী, সংহতি-বিরোধী ও কৃষ্টি-বিরোধী চলনই হবে তাদের স্বভাবধর্ম্ম। তারা নিজেরা ভ্রষ্ট-চরিত্র হ'য়ে পরিবেশকেও সর্ব্বনাশের পথে বিভ্রান্ত ক'রে চলতে থাকবে।...... ক্রমশঃ......
আলোচনা প্রসঙ্গে পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৩৭-১৩৯
শ্রীশ্রীঠাকুর-- ভক্তিই হ'ল আদত জিনিস। ভক্তি হ'লে জ্ঞান আপনিই আসে। ভক্ত চায় ভগবান ও সৃষ্ট যা-কিছুকে অনন্তকাল অফুরন্ত রকমে সেবা ক'রতে এবং তার ভিতর-দিয়ে তাঁকে নানারকম উপভোগ ক'রতে।
একটি ভাই-- ভক্তেরও তো দুঃখ কষ্ট পেতে হয়।
শ্রীশ্রীঠাকুর-- সুখ যদি কেবল থাকে,তা'হলে কি সুখ ভোগ করা যায়? শুধু রসগোল্লাই যদি মানুষ খায়,তবে কি রসগোল্লার স্বাদ পায়?
উক্ত ভাই-- অনেকের যে কেবল কষ্টই ভোগ ক'রতে হয়।
শ্রীশ্রীঠাকুর-- ভক্তের থাকে তঁদর্থী ক্লেশসুখপ্রিয়তা! সে কষ্টকে কষ্ট মনে করে না। সে তাঁর জন্য সব কষ্টকে আনন্দে আনন্দে বরণ ক'রে নেয়।
Comments
Post a Comment