![]() |
Sri Sri Thakur and Muslims |
প্রশ্ন--অন্যের বাঁচা ও বৃদ্ধি পাওয়াকে বজায় রাখিয়া আমার সুখ-সুবিধা সম্ভব কেমন করিয়া? -তা' কি সব সময়ে হ'তে পারে?
শ্রীশ্রীঠাকুর-- আমি-ভাবের উদ্বোধনে যদি environment- এরই উপর নির্ভর করে,তাহলে environment-এর উদ্বর্দ্ধনেই এই আমিরও উদ্বর্দ্ধন হইবে নিশ্চয়! তাহলেই আমার কর্ত্তব্য তা' যা'তে নাকি আমার environment উদ্বর্দ্ধিত হয়-আর,তা করতে হ'লেই environment এর সেবা আমার থাকা এবং বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য অপরিহার্য্য, আর,এই সেবা বিমুখ-যত হইব,তত আমি দুর্ব্বল ও অবসন্ন হইব,আর এই থাকার অপলাপ অবশ্যম্ভাবী হইয়া উঠিবে সন্দেহ নাই। তাহ'লেই দেখা যায়,আমাদের এই সুখ-সুবিধার ব্যাপারে environment মুখ্য জিনিস।
প্রশ্ন-- তবে কী কর্ম্মীই ধার্ম্মিক?
শ্রীশ্রীঠাকুর-- হাঁ,ধর্ম্ম মানেই তাই-যেমন করে চললে,বললে,ভাবলে আমাদের being ও becoming বজায় থাকে ও বৃদ্ধি পায়। সাধারণ সন্ন্যাসী অপেক্ষা-অনেক তথাকথিত মহাপুরুষ অপেক্ষা-দাশ দা বেশী ধার্ম্মিক ছিলেন,কারণ তাঁর পারিপার্শ্বিকের সেবা জীবনের মুখ্য ব্রত ছিল। He beloved environment sincerely to fulfil his principle। আদর্শকে সার্থক করার উন্মাদনার আকুল আগ্ৰহে সমস্ত পারিপার্শ্বিককে তিনি অঢেলভাবে ভালোবেসেছিলেন।
প্রশ্ন--ধর্ম্ম মানে যদি তা'-ই হয়,তবে তা' নিয়ে আবহমান কাল থেকে এত মারামারি কেন?এত সরলই যদি ধর্ম্ম হ'ত, তবে শ্রীকৃষ্ণ, বুদ্ধ,খৃষ্ট, মহম্মদ-ইঁহাদের করা,বলা,ভাবা আর চলার কোন তফাৎ-ই থাকত না?
শ্রীশ্রীশ্রীঠাকুর-- ধর্ম্মের মারামারি কখনো নাই,কোথাও নাই। কারণ ধর্ম্ম মানেই হ'ল তাই করা -যা'তে নাকি being and becoming অব্যাহত থাকে,অটুট হয়,বর্দ্ধনশীল হয়-আর এ প্রত্যেক individual- এরই interest, তাই ধর্ম্মের prime laws - এর ভিতর কোথাও কোন গরমিল নাই। গরমিল আসিয়া পড়ে দেশ-কাল-পাত্র-ভেদে,আর তা' যে দেশের যে-কালের বেশিষ্ট্যে যেখানে যাহা করা প্রয়োজন,তদনুসারে। যেমন মাদ্রাজে নাকি লঙ্কা বেশী না-খাইলে লোক অসুস্থ হইয়া পড়ে,শুনেছি পিয়াঁজ কোথাও নাকি অমৃততুল্য,তাই এগুলি universal নয়। আর,এইগুলির উপর দাঁড়াইয়া মানুষ যখন ধর্ম্মকে বিচার করে,তখনই বোধহয় দ্বন্দ্বের অভ্যুদয় হয়।
প্রশ্ন-- তাই যদি হয়,তবে ধর্ম্মে-ধর্ম্মে এত বিরোধ কেন? আর হিন্দু, মুসলমান, খৃষ্টানে যে এত বিদ্বেষ,এত হিংসা-এ কি-ক'রে সম্ভব?
শ্রীশ্রীঠাকুর-- এ হিংসার কারণই না জানা। আমার মতে প্রকৃত ধার্ম্মিক প্রত্যেক হিন্দুই মুসলমান-খৃষ্টান ,-প্রকৃত ধার্ম্মিক প্রত্যেক মুসলমান খৃষ্টানই হিন্দু;-আর ইহার ব্যতিক্রম যেখানে হইয়াছে,সেখানেই অজানার মুখোস-পরা ধর্ম্মের উল্লম্ফন মাত্র-আর কিছু না। মহম্মদকে মানাই যদি ধর্ম্ম হয়,আর,'খোদা এক' মানা যদি ধর্ম্ম হয়-আর তা'তে জগতে পূর্ব্ব পূর্ব্ব গুরুদের মানায় যদি কোন বাধা ও আপত্তি না থাকে,তবে ব্রাহ্মণ থাকিয়াও আমি মুসলমান হইতে পারি,ক্ষত্রিয় হইয়াও আমার মুসলমান হইতে বাধে না,আবার মুসলমান হইয়াও ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয় হইতে বাধা নাই।
,
নানাপ্রসঙ্গে-১ম খণ্ড।। (প্রথম অধ্যায়)।।
Extra:
আমার দাদা যখন দীক্ষা নেয় তখন ইষ্টভৃতির প্রচলন হয় নাই।কয়েক বৎসর পর একদিন দেখলাম দাদা বাড়িতে এসে সকালে--সন্ধ্যায় থালায় কিছু চাল নিয়ে মন্ত্রপাঠ করত।তখন আমাদের বাড়িতে দাদা একাই দীক্ষিত ছিলেন। মা ঐ দাদা কে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন '"আরে চাল দিয়ে তুই কি মন্ত্র পাঠ করলি??""দাদা মা কে বললেন ইষ্টভৃতি ---এ নিয়ে মা কে বোঝাতেই মা বললেন --- এ আবার কেমন ঠাকুর ??? রোজ রোজ তাঁর ভরণপোষন,, আহারের জন্য চাল রাখতে হবে। কই আমাদের গুরু ঠাকুর তো অমন বিধান দেন না?? সে সময় দীক্ষা নিলেই নিরামিষ খাওয়া,,ইষ্টভৃতি করা সাধারণ লোকের মনে কষ্ট হতো।
ইষ্টভৃতি প্রর্বতন হয় 1938 এর অক্টোবর মাসে।আর স্বস্ত্যয়নী প্রবর্তন হয় 1937 শেষের দিকে। 1935 এর শেষের দিকে মাত্র 15 জন ঋত্বিক কে নিয়ে ঋত্বিক সংঘ সংঘটিত হয়েছিল। ঐসময় পাঞ্জার প্রবর্তন হয়। 1938 এর জুলাই মাসে প্রথম ঋত্বিক অধিবেশন শুরু হয়।
ঐসময়কার এক উল্লেখ্য ঘটনা :--
ফরিদপুর জেলার এক বিধবা মা তার একমাত্র ছেলে কে নিয়ে পাবনা আশ্রমে আসেন। তপোবন স্কুলে ছেলে কে পড়াাবার ইচ্ছা। শ্রীশ্রী ঠাকুরের নিকট নিবেদন করেন। হোষ্টেলের ব্যয় বহন করা তার পক্ষে কষ্ট কর।সেই সময় ঠাকুরের কাছে ই ছিলেন শরৎ চন্দ্র হালদার দা। তিনি ঐ মায়ের কথা শুনে তার বাড়িতে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন।কিন্তু হোস্টেলেই থাকার ব্যবস্থা হল।কিছুদিন পরে একটি দুঘটনায় ঐ ছেলেটির মৃত্যু হয়। আশ্রমে শোকের ছায়া নেমে আসে। শ্রীশ্রী ঠাকুর ও খুব মর্মাহত হন।একদিন এক দাদা ঠাকুর কে জিজ্ঞাসা করলেন -- ছেলেটির এমনভাবে মৃত্যু কেন হল ও তো কোন অপরাধ করেনি।শ্রীশ্রী ঠাকুর চুপ ছিলেন। কিন্তু একই প্রশ্ন বারবার আসতেই শ্রীশ্রী ঠাকুর বললেন """""ও কি ইষ্টভৃতি ঠিক ঠিক করত???"""""
পাশেই তপোবন স্কুলের একজন শিক্ষক ছিলেন সঙ্গে সঙ্গে বললেন ---না ঠাকুর ও তো ইষ্টভৃতি করতই না।বরং কয়েক বার অন্য ছেলের ইষ্টভৃতি চুরি করে ধরা পরে। শ্রী শ্রী ঠাকুর শুনেই হতাশায় দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে চুপ করে রইলেন।
শ্রী শ্রী ঠাকুর নিষ্ঠা সহকারে ইষ্টভৃতি করার ফল নিকুম্ভিলা যজ্ঞের মতো বলেছেন।তাই সৎসঙ্গী দের অতিপ্রত্যুষে জল গ্রহণের পূর্বে ইষ্টভৃতি নিবেদন করে বাইরে বাহির হওয়া বা অন্য কাজে মন দেওয়ার নির্দেশ আছে।কোন কারণে এর কিছু ঘাটতি হলেই তার ফল অন্যরূপ হতে পারে।
শ্রী কালীপদ রাহা ( স্মৃতিযানে আমার জীবন -- আলোচনা --জুলাই 2017)
Comments
Post a Comment