![]() |
Sri Sri Thakur - Alochana Prasange |
শ্রীশ্রীঠাকুর---সুধীরভাইকে (রায়চৌধুরী) বললেন---আমাদের যদি শত শত রিম কাগজের দরকার হয়, তাহ'লে কন্ট্রোলের দামে যোগাড় ক'রে দিতে পারিস?
সুধীরভাই---চেষ্টা ক'রে দেখতে পারি। আপনার দয়া থাকলে জোগাড় হওয়া অসম্ভব না।
শ্রীশ্রীঠাকুর (সহাস্যে)--- আমার আবার দয়া কিসের ? আমার হ'ল গরজ। ঠেকায় প'ড়ে চাচ্ছি। দয়া তোদের যারা চেষ্টা করবি ও তাদের যারা সুযোগ দেবে।
শ্রীশ্রীঠাকুরের কথা শুনে সবাই হেসে ফেললেন।
সুধীরভাই---আমি খোঁজ নেব।
শ্রীশ্রীঠাকুর---যাতে কাজ হাসিল হয় তা_ করাই চাই।
একটি দাদা একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে বললেন---আমি তার কাছে গিয়েছিলাম একজন রোগীর ওষুধের জন্য কিছু সংগ্রহের আশায়। অযথা এমন চড়া চড়া কথা শুনিয়ে দিল যে নিজেকে বড় অপমানিত মনে হচ্ছে। আমি তো আর নিজের জন্য যাইনি যে আমাকে কথা শোনায় ? লোকটার খুব দেমাক হয়েছে।
শ্রীশ্রীঠাকুর হাসতে-হাসতে বললেন--- অল্পেতেই অত চ'টে যাস কেন ? সে কী অবস্থায় ছিল, কেনই বা ওভাবে বলল, তাও তো ভেবে দেখবি। কারও কাছে কোন কথা পাড়তে গেলে তার হাবভাব ও অবস্থা লক্ষ ক'রে পাড়তে হয়। আর, চাইতে হয় এমন ক'রে, যাতে মানুষ বিরক্ত না হ'য়ে উদ্দীপ্ত হয়, উৎফুল্ল হয়, অনুকম্পা-পরায়ন হ'য়ে ওঠে। তোমার কথা শুনে মনে হ'চ্ছে--- তুমি নিজের জন্য চাচ্ছ না, এইজন্য যেন মানুষের মাথা কিনে বসেছ। যার জন্যই বা যে জন্যই কারো কাছে কিছু চাও, যেখানে তুমি প্রার্থী, সেখানে তোমার জানা চাই, কেমন ক'রে তার সহানুভূতির উদ্রেক করতে হয়। নিজের ত্রুটি কোথায় তা' না দেখে এই যে পরের দোষ গেয়ে বেড়াও, এতে কিন্তু ভাল হয় না। অবশ্য, সেও যে ঠিক করেছে, এ-কথা আমি বলি না। তবে, অন্যের দোষ না দেখে নিজের দোষ দেখা ভাল।.... আর, অহংকারের ভিক্ষা ভাল না। আবার, এমনতর দৈন্যজীর্ণ রকমেও চাইতে নেই, যাতে মানুষের অন্তর অবসন্ন হ'য়ে ওঠে। সহজভাবে সক্রিয় সহানুভূতির উদ্বোধন যাতে হয়, তেমনতরভাবে চাইতে হয়।
সুধাংশুদা (মৈত্র) এসে দাঁড়াতেই শ্রীশ্রীঠাকুর সহাস্যে বললেন---ক্যাপেল (Capel) কী বলে?
সুধাংশুদা--- ওর যখন যেটা খটকা লাগে, তখন সে সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে, শোনে, বোঝে, কিন্তু নিজের মনোভাব কখনও ব্যক্ত করে না।প্রশ্নগুলো শুনে মনে হয় লোকটা বুদ্ধিমান ও চিন্তাশীল।
শ্রীশ্রীঠাকুর---দেখ, যে-সে তালে-বেতালে যাজন ক'রে ওকে যেন উত্যক্ত না করে। আর, ওর যেন কোন অসুবিধা না হয় এখানে।
সুধাংশুদা (সহাস্যে)--- এখানে উৎকট উৎসাহী তো অনেকে আছে, তারা সুযোগ পেলে এলোধাবাড়ি যাজন করতে ছাড়ে না। তবে ক্যাপেল এখানকার ধরন বুঝে গেছে, কার সঙ্গে কিভাবে কথা বার্তা বলতে হয়, তা বোঝে। তাই, যাকে এড়িয়ে চলতে চায়, নির্ব্বিবাদে এড়িয়ে চলতে পারে।
শ্রীশ্রীঠাকুর শুনে একটু হাসলেন।..... ক্রমশঃ.....
আলোচনা প্রসঙ্গে পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা---১৩১-১৩২।
ধীরে-ধীরে মেঘলা কেটে গিয়ে রোদ উঠেছে। তাই দেখে শ্রীশ্রীঠাকুর খুব খুশি। গায়ের চাদরটা খুলে ফেললেন।বঙ্কিমদাকে দেখে বললেন--- এই যে রয়টার এসে গেছে। সংবাদ কী কও দেখি।
বঙ্কিমদা (রায়)--- নূতন সংবাদ কিছু নেই।
শ্রীশ্রীঠাকুর (সহাস্যে)--- নূতন সংবাদ যখন দিলে না, তাহ'লে কও---শাস্-ধাতুর মানে কী-কী আছে।
বঙ্কিমদা বই দেখে এসে বললেন---শাসন, উপদেশ, অনুশাসন,আশা প্রার্থনা।
শ্রীশ্রীঠাকুর--- শাস্ত্র কথা তো শাস্-ধাতু থেকে, তাই না?
বঙ্কিমদা---আজ্ঞে হ্যাঁ।
ইতিমধ্যে কেষ্টদা (ভট্টাচার্য্য) এসেছেন। তিনি কথায়-কথায় বললেন--- আজকালকার শিক্ষিত লোক যারা, তাদের বেশির ভাগই শাস্ত্রীয় অনুশাসনের তাৎপর্য্য বুঝতে পারে না।
শ্রীশ্রীঠাকুর--- তার মানে, আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির সঙ্গে পরিচয় নেই। দৃষ্টিভঙ্গীই উল্টো হ'য়ে গেছে। তাই, নিজেদের জীবন-দাঁড়াকে অগ্রাহ্য করতে দ্বিধা বোধ হয় না। কিন্তু ইষ্ট, কৃষ্টি, বৈশিষ্ট্য ও জাতীয় মেরুদন্ডকে বরবাদ করার বুদ্ধি যদি হয়, তাহ'লে মানুষের নিজস্ব ব'লে কিছু থাকে না। সে-অবস্থায় পরপদলেহী কুক্কুরের মত দ্বারে-দ্বারে ঘোরা ছাড়া পথ থাকে না। কারণ,ব্যক্তিত্বের যে গড়ন থাকলে পরিবেশের সেবার ভিতর-দিয়ে মানুষ সৎ ও স্বাধীনভাবে দাঁড়াতে পারে, সেই গড়নই যায় ভেঙ্গে।ফলে,শিশ্নোদরপূরণী সন্ধিৎসায় অন্নবস্ত্রের লোভে, পয়সার লোভে, মিথ্যা অভিমানের লোভে আত্মবিক্রয় ক'রে নানারকম হীনবৃত্তি অবলম্বন করা ছাড়া উপায় থাকে না।শ্রেয়পন্থী যারা, তাদের স্বাভাবিক প্রবণতা হওয়া উচিত--- অশ্রেয়পন্থী যারা, তাদের ঐ শ্রেয়কৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ক'রে শ্রেয়সন্দীপ্ত ক'রে তোলা। কিন্তু আমরা শ্রেয়ের কোলে থেকেও তাকে উপেক্ষা ক'রে অধঃপাতের উপাসক হবার জন্য লোলুপ হ'য়ে উঠেছি।এ নিতান্ত দুর্দ্দৈব ছাড়া আর কিছু নয়।...... ক্রমশঃ.....
আলোচনা প্রসঙ্গে পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৪০-১৪১।
Comments
Post a Comment