![]() |
Father and Son Amazing Incident |
----পিতা-পুত্রের লীলা----
শ্রীশ্রীঠাকুর----গুরু মানেই সদগুর--আচার্য্য। গুরু-পুরুষোত্তমই সচ্চিদানন্দের মূর্ত্ত বিগ্রহ, তিনিই রুপায়িত ঈশ্বর প্রেরণা, তিনিই আত্মিক শক্তির প্রোজ্জ্বল প্রকাশ, অস্তিবৃদ্ধির পরম অমৃতপথ। দুনিয়ার যত দ্বন্দের মাঝে অন্বয়ী সার্থকতার সারকেন্দ্র তিনিই। তাঁকে ভালবেসে, তাঁর ইচ্ছা পরিপূরণ ক'রে, তদনুগ আত্মনিয়ন্ত্রণে, তাঁরই সঙ্গ, সাহচর্য্য ও সেবার ভিতর-দিয়ে মানুষ ঈশীস্পর্শ লাভে ধন্য হয়। আর গুরু-পুরুষোত্তমকে direct (সরাসরি) যারা না পায়, তারা তঁদনুবর্ত্তী আচার্য্য-পরম্পরার ভিতর দিয়ে তাঁর ভাবটাই কিছু না কিছু পায়।........
(আঃ প্রঃ ১/ ৪.১২.১৯৪১)
মন্তব্যঃ--- গুরু-পুরষোত্তমই সদগুরু এবং তিনি সশরীরে থাকলে তিনিই আচার্য্য হন।
অন্যদিকে শ্রীশ্রীঠাকুর সত্যানুসরণে বললেন,""ভারতের অবনতি তখন থেকে আরম্ভ হয়েছে, যখন থেকে ভারতবাসীর কাছে অমূর্ত্ত ভগবান্ অসীম হয়ে উঠেছে--- ঋষি বাদ দিয়ে ঋষিবাদের উপসনা আরম্ব হয়েছে। ""
_________ শ্রীশ্রীঠাকুর।
এখন কথা হচ্ছে, অবনতি কি?
অবনতি হচ্ছে "পতন" আর উন্নতি হচ্ছে বৃদ্ধি বা উত্থান। ভারতের অবনতি মানে পতন তখন থেকেই শুরু হয়েছে যখন থেকে আমরা অমূর্ত্ত ভগবান অর্থ্যাৎ যে ভগবানের কোন মূর্ত্তি নেই, কোন রূপ নেই, আকার নেই বর্তমান সেই ভগবানের পূজা শুরু করছে। অমূর্ত্ত ভগবানের উপাসনা মানে অসীমের উপাসনা। অর্থ্যাৎ অমূর্ত্ত ভগবানের পূজা করতে গিয়ে মানুষ নিজের খেয়ালমত পূজা শুরু করছে তাই আমাদের অবিকৃত ভাবে পূজা করার জন্য জীবন্ত আদর্শ বা আচার্য্য গুরুত্বপূর্ণ।
যখন থেকে আমরা ঋষির মতামত অর্থ্যাৎ ঋষি যা' বলেন সেই মতামতের উপাসনা শুরু করছে জীবন্ত ঋষিকে না মেনে, ঋষিকে যথোচিত সম্মান না করে তার মতবাদের তথা আকাশের ভগবানের উপাসনা তখন থেকে ভারতবাসীর অবনতি শুরু হয়েছে।
এখান থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়,
জীবনে উন্নতি করতে হ'লে জীবন্ত আদর্শ মানে আচার্য্য প্রয়োজন। তা না'হলে শুধু বাণী দিয়ে হয় না। চরিত্র গঠনের জন্য জীবন্ত আদর্শের প্রয়োজন অতিব গুরুত্বপূর্ণ।
শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর উপরোক্ত বাণীতে বলেছেন "তঁদনুবর্ত্তী আচার্য্য-পরাম্পরা"-র কথা। কারণ আমরা তার সঠিক অবিকৃত আদর্শের সঠিক নির্দেশনা পাবো পরবর্তীতে জীবন্ত আদর্শ আচার্য্য 'র মধ্যে দিয়ে। জীবন্ত আদর্শ না থাকলে মানুষ নিজের খেয়ালমত পূজা- উপাসনা শুরু করতো তাই ঠাকুর "তঁদনুবর্ত্তী আচার্য্য-পরাম্পরা" কথা বলে গেলেন। কিন্তু অনেকে আজ জীবন্ত আদর্শ বাদ দিয়ে নিজের খেয়াল খুশি মত ঠাকুরের উপাসনা শুরু করছে স্বার্থান্ধ হয়ে।
যাকে তাকে দিয়ে দিচ্ছে পবিত্র এস পি আর পাঞ্জা। ইষ্টভৃতির টাকা নিজেরা কালেকশন করে নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করছে। এমন কি ঠাকুরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সৎসঙ্গের আগে তার নাম ব্যবহার করার সাহস দেখিয়েছে। #যেমনঃ "শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ হিমায়েতপুর পাবনা"
এই ইষ্টবিরোধী, আচার্য্য বিরোধী মিশনারীরা ঠাকুরকে বা তাঁর বাণী গুলো ব্যবহার করে খুব সুকৌশলে। যে কোনও সৎসঙ্গীর কাছে হিমায়েতপুর হল একটি বিশেষ আবেগের জায়গা। কারণ একটিই, সেটি হল হিমায়েতপুর শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্মস্থান। আর মিশনারীরা এই আবেগকেই কাজে লাগায়। আর এই আবেগের বশে অনেকেই তাদের সমর্থনও করেন। কি করে তারা এই আবেগ কাজে লাগায় তা বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করছি।
*
সৎসঙ্গী মিশনারী অ্যাসোসিয়েশন যখন সাধারন সৎসঙ্গীদের বিভ্রান্ত করতে পারল না তখন তারা নতুন উপায় অবলম্বন করলেন| মানুষের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবার জন্য নিজেদের সংগঠনের নাম পরিবর্ত্তন করল| এ ব্যাপারে তারা ঠাকুরের আদর্শকেও জলাঞ্জলি দিল| শ্রীশ্রীঠাকুর নিজের নাম কোনও প্রতিষ্ঠানের আগে কোনও দিনও ব্যবহার করতে দেননি আর তা পছন্দও করতেন না| তাই ঠাকুর থাকাকালীন যত প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছিল তাতে কোথাও নিজের নাম দিতেন না| যেমন সৎসঙ্গ পাবলিশিং হাউস, রষৈসনা, স্বস্তি সেবক বাহিনী ইত্যাদি ইত্যাদি| নিজের নাম ব্যবহার নিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুর কি বলেছেন তা দেখা যাক:-
★★★★★★★★★
দেওঘর কলেজের বিজ্ঞান শাখা খুলবার জন্য শ্রীশ্রীঠাকুর কিছু টাকা কলেজ কর্তৃপক্ষকে দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সেই উদ্দেশ্যে টাকাও সংগ্রহ হচ্ছে।
★
জনৈক ভদ্রলোক (কলেজ কর্তৃপক্ষের)- ঐ টাকাটা দিয়ে কলকাতা কিংবা পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত কলেজের সাথে হোষ্টেল তৈরী করা হবে। লেখা থাকবে "ঠাকুর-ছাত্রাবাস"। কলেজ কম্পাউন্ডের মধ্যে একটা আলাদা ব্লক থাকল। ছাত্ররা সেখানে থাকবে।
★
শ্রীশ্রীঠাকুর- ঠাকুরের নাম আবার কেন? ও সবে সুবিধা হবে না নে।
★
বিনোদানন্দবাবু- আজ্ঞে অসুবিধার কি হবে? সেখানে কালচারাল একটা কিছু থাকবে। ছেলেরা জানবে ঠাকুরের..……
★
শ্রীশ্রীঠাকুর-ও টাকা ছেলেদের education (শিক্ষা) এর জন্য খরচ করাই ভাল।
★
নিখিলদা (ঘোষ)- ঠাকুরের ইচ্ছা, যে টাকা তিনি দিচ্ছেন তা দিয়ে যেন ছেলেরা আই এস সি এবং বি এস সি পর্য্যন্ত পড়তে পারে।
★
বিনোদানন্দবাবু ও অধ্যক্ষ মহোদয় একসঙ্গে বলে উঠলেন- তাই হবে ওঁর যা আজ্ঞা তাই হবে।
★
অধ্যক্ষ- সায়েন্স ব্লকই হবে। তাতে "ঠাকুর সায়েন্স ব্লক" লেখা থাকবে।
★
শ্রীশ্রীঠাকুর- ঠাকুর কেন? বরং লেখাই যদি থাকে তবে "সৎসঙ্গ" বা সৎসঙ্গী বলে থাকতে পারে।
★
বিনোদাবাবু- আপনার যা আজ্ঞা হয়।
★
জীবন-দ্যুতি
সঙ্কলয়িতা-ডঃ রেবতী মোহন বিশ্বাস
২৮-০৭-১৯৫৫
উপরের এই আলোচনা থেকেই বোঝা যায় যে, যে কোনও প্রতিষ্ঠানের নামের জায়গায় ঠাকুর নিজের নাম ব্যবহার একেবারেই পছন্দ করতেন না| কিন্তু মিশনারীরা নিজেদের সুবিধার জন্য,নিজেদের পরিচিতি বাড়াবার জন্য ঠাকুরের নাম ব্যবহার করা শুরু করলেন ঠাকুরের পছন্দ অপছন্দের ধার না ধেরে। যেহেতু ১৯৬৮ সালে (ঠাকুরের জীবদ্দশায়) প্রতিষ্ঠান তৈরীর আদর্শগত ভিত্তি তারা মানুষের কাছে তুলে ধরতে ব্যর্থ হল তাই তারা নাম পাল্টে নতুন নামে কাজ শুরু করল। সৎসঙ্গী মিশনারী অ্যাসোসিয়েশন নামটির সাথে পুরনো ইতিহাসকেও তারা ঝেঁড়ে ফেলতে চাইল। তৈরী হল "শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ" নামক প্রতিষ্ঠান।
পাশাপাশি সাধারন সৎসঙ্গীদের বোঝাতে চেষ্টা করল যে দ্যাখো আমরা ঠাকুরকে প্রাধাণ্য দিয়ে তারই নামে সংগঠনের নাম রেখেছি|
তারা তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছেনঃ-
"১৯৭১: ঐতিহাসিক ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সমাপনান্তে স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাটিতে শ্রীশ্রীঠাকুরের জন্মস্থানকে ঘিরে, নব উদ্যমে “শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ”র যাত্রা শুরু..................।"(ওয়েবসাইট থেকে হুবহু কোট করলাম)
*
কিন্তু সত্যি-ই কি তাই? তাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালে না ১৯৬৭ সালে (ঠাকুরের জীবদ্দশায়)?
১৯৬৭ সালে যদি তাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল তবে কেন মিশনারীরা সেই সালটা গোপন করে? ইতিহাসের কোন অধ্যায় তারা লুকোতে চায়? কেন লুকোতে চায়?
এটা গেল ঠাকুরের নাম ব্যবহারের কাহিনি| এবার আসি হিমায়েত পুর প্রসঙ্গে| আগেই বলেছি ঠাকুরের জন্মস্থান হওয়ায় হিমায়েতপুর আপামর সৎসঙ্গীদের কাছে একটি বিশেষ আবেগের জায়গা| আমার নিজের কাছেও হিমায়েতপুর একটি স্বপ্ন পূরণের স্থান| এই আবেগকে কাজে লাগায় মিশনারীরা| তারা প্রচার করে সৎসঙ্গ হিমায়েতপুর কে অবহেলা করে| এই কথা শুনলে যে কারও (সৎসঙ্গীর) রেগে যাবারই কথা| কিন্তু বাস্তবটা তা নয়| মিশনারীদের সাথে সৎসঙ্গের কর্ম্মপদ্ধতি মিলবে না| সৎসঙ্গ মিশনারীদের কর্মপদ্ধতি সমর্থন করে না| আর এই কথাটা একটু ঘুরিয়ে মিশনারীরা প্রচার করে যে সৎসঙ্গ হিমায়েতপুরকে অবহেলা করে|
মিশনারীরা ভালভাবেই জানে হিমায়েতপুর আবেগকে যতদিন তারা ব্যবহার করতে পারবে ততদিন তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ হবে| তাই এই আবেগকে তারা বিশেষ ভাবেই সংরক্ষিত করে||
জীবন্ত আদর্শের ও শ্রীশ্রীঠাকুর "তঁদনুবর্ত্তী আচার্য্য-পরাম্পরা"র বিরুদ্ধতা করে নিজের খেয়ালখুশি মত নিজেদের স্বার্থ প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত।
Comments
Post a Comment