![]() |
Sri Sri Thakur Anukulchandra about Lady |
নারী সম্পর্কে শ্রী শ্রী ঠাকুর
*⃣একবার শ্রীশ্রীঠাকুর কে প্রশ্ন করা হল*⃣
প্রশ্নঃ মেয়েদের কি ব'লে ডাকা ভাল?
উত্তরে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন- মেয়েদের sublime form (মহিমান্বিত রূপ)- ই হ'লো 'মা' তাই মা ব'লে ডাকাই ভালো। [আঃপ্রঃ ২১.১৩৮]
মেয়েদের শ্রদ্ধা করার প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর তার অবস্থান স্পষ্ট করে বলছেন আলোচনা প্রসঙ্গে।
শ্রীশ্রীঠাকুরঃ মেয়েদের প্রতি সমীহ ও সম্ভ্রম যেন আমার মজ্জাগত হয়ে গেছে। ছেলেবেলায় যখন বুঝলাম, মেয়েদের পেটে মেয়ে ও ছেলে দুই-ই হয়, কোন মানুষই মায়ের পেট থেকে ছাড়া জন্ম নিতে পারে না, তখন মেয়েদের প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা হল। ভাবলাম এরা তো ভগবানের মত। তাই একটা বাচ্চা মেয়ে দেখলেও, সে মায়ের জাতের একজন -- এই কথা মনে করে শ্রদ্ধা হয়।
[ আলোচনা প্রসঙ্গে - ৪/৮১ ]
শ্রীশ্রীঠাকুর যেখানে একটা বাচ্ছা মেয়েকেও মায়ের আরেক রূপে দেখে ভক্তির কথা ও ভগবানের মত বলেছেন। সেখানে তার নামে নারী-বিদ্বেষী ট্যাগ লাগিয়ে অপপ্রচার করাকে হাস্যকর ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে। 😕
আর এমন মিথ্যা অপপ্রচার কেবল মানুষ নামক এযুগের কিছু রাবণ, কংস, পিশাচরা ছাড়া কোন ভালো মানুষ করতে পারে না।
আমি এই রাবণ, কংসদের এরকম অপপ্রচারে ওততটা কান দিই না কারণ যেখানে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে নারীআসক্ত, সহ বিভিন্ন ভাবে অযৌক্তিক কথা বলে এখনো বদনাম করা হয়। এমনকি ভগববান শিবের ৬০,০০০ স্ত্রীর তথ্য নিয়ে খিল্লি, খিস্তি হয় সেখানে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র এর ক্ষেত্রে হবে না!! তা কি হয়?🤔
প্রতি যুগে যুগে এরকম অপপ্রচার, মিথ্যাচার করা হয়েছে ভগবান, মহাপুরুষ, মুনি, ঋষিদের নামে।
কিন্তুু তাদের আদর্শে এতটুকু কালিমালিপ্ত কেউ কি করতে পারছে?? প্রশ্ন রইলো! তেমন কোন প্রমাণ থাকলে ইমেল বা কমেন্ট করুন।
সূর্য্য উদয় হলে জগত যেমন আলোকিত হয় কেউ তা আটকে রাখতে পারে না তেমনি ঈশ্বর যখন ভগবান, মহাপুরুষ হয়ে জগতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জন্মগ্রহণ করেন তখনও জগত তার আদর্শে, শিক্ষায় আলোকিত হয়। কারো শক্তি নেই সেই আলোকে আটকানোর।
যারা আজ সমাজে নারী-ধর্ষণ, স্ত্রী নির্যাতনের অপরাধে জেল খাটছে তারাই বলে কি না 😃
ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ও তার ভক্তরা নারী-বিদ্বেষী।
যারা সমাজে নারীদের তথা মায়েদের তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য, কমজোর ভাবে তাদের উদ্দেশ্য শ্রীশ্রীঠাকুর বলছেন,👇
"মায়েদের তুই বোকা বলিস? বোকা হলে কখনও সন্তান পেটে ধরে মানুষ করে তুলতে পারে?
দে তো একটা ব্যাটা ছাওয়ালের কাছে একটা মা হারা শিশুকে মানুষ করার ভার।
প্রায়ই হাগে- মুতে একসা করে ফেলবেনে।
কিন্তু মায়েরা কেমন অনায়াসেই করে তা।
তাই নিজেদের কখনও ভাববি না। তোরাইতো বুদ্ধিস্বরুপিণী, লক্ষ্মীস্বরুপিণী, দূর্গতিনাশিনী, দুর্ম্মতিদলনী দূর্গা। তোরা আছিস, তাই তো আমাদের আগলে রেখেছিস। নইলে আমাদের উপায় ছিল কী? "
[তথ্যসূত্র: আলোচনা প্রসঙ্গে, ৬ই কার্তিক, শুক্রবার, ১৩৪৯ (ইং ২৩/১০/১৯৪২)]
শ্রীশ্রীঠাকুর উপরোক্ত কথা থেকে বোঝা যায় তার কাছে পুরুষের চেয়ে নারীর অবস্থান ছোট নয়।
বরং যারা এমনটা ভাবে তাদের চ্যালেঞ্জ করছেন পারলে একটা মায়ের মত সন্তানকে লালন,পালন
করে মানুষের মত মানুষ করে দেখানোর!!!
কন্যা সন্তান প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন,
সমাজে মেয়ে বেশী হলে জাতির Iongevity denote ( দীর্ঘায়ু জ্ঞাপন ) করে।
( আ:প্র: ৯/১৩১)
শ্রীশ্রীঠাকুরের সহধর্মিণী জগতজ্জনী শ্রীশ্রীবড়মা
এক মায়ের সন্তান জন্ম নেওয়ায় জিজ্ঞেস করলেনঃ 👇
" কি লো কি হইছে? একজন নিচু গলায়
বললেন -'আজ্ঞে, মেয়ে হয়েছে'
তখন শ্রীশ্রীবড়মা বললেনঃ ' আস্তে-আস্তে কস্ ক্যান? প্রথম মেয়ে হওয়া ভাল, বাপের আয়ু বাড়ে'
সূত্রঃ [আলোচনা শ্রাবণ ১৪২৫/৫৮৪]
সমাজে যখন নারীদের তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য, অবলা বলে বিভিন্নভাবে ছোট করা হয় তখন অনেক নারী'ই নিজেদের অসহায় মনে করে তারা ভাবতে শুরু করে যে, তারা সত্যিই পুরুষের চেয়ে কমজোরি।
মায়েরা যেন এমনটা ভেবে দূর্বল না হয়ে পড়ে।
তাই ঠাকুর নারীদের উৎসাহিত করে বললেন,
"তোরাইতো বুদ্ধিস্বরুপিণী, লক্ষ্মীস্বরুপিণী, দূর্গতিনাশিনী, দুর্ম্মতিদলনী দূর্গা।
তোরা আছিস, তাই তো আমাদের আগলে রেখেছিস। নইলে আমাদের উপায় ছিল কী? "
শ্রীশ্রীঠাকুর নারীদের দেবী দূর্গা ও লক্ষীর চোখে দেখতে বলেছেন কারণ অবিবাহিতা মেয়ে বা পরস্ত্রীগনকে আমরা যখন মাতৃরূপ জ্ঞান করবো তখন সেই চিন্তায় কোন ধরনের কুচিন্তা বা কামের উদ্ভব হবে না কেননা আমরা যখন কাউকে প্রকৃতভাবে মায়ের স্থানে স্থান দেই তখন সেখানে শ্রদ্ধা আর পবিত্রতা বিরাজ করে। মূলত সেই কারনেই শ্রীশ্রীঠাকুর যেকোনো বয়সের নারীকে "মা" বলে সম্বোধন করতে বলছেন ।
শ্রীশ্রীঠাকুর তার ২২ বছর বয়সে নিজ হাতে লেখা 'সত্যানুুসরণ' এ বলেছেন,
'কামিনী থেকে কাম বাদ দিলে ইনি মা হয়ে পড়েন। বিষ অমৃত হয়ে গেল। আর মা মা-ই, কামিনী নয়কো। মার শেষে গী দিয়ে ভাবলেই সর্বনাশ। সাবধান! মা কে মাগী ভেবে মর না।'
'প্রত্যেক মাই জগজ্জনী। প্রত্যেক মেয়েই নিজের মায়ের বিভিন্ন রুপ, এমতর ভাবতে হয়। মাতৃভাব হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত না হলে স্ত্রীলোকে ছুতে নেই—যত দূরে থাকা যায় ততই ভাল; এমনি কি মুখদর্শন না করা আরও ভাল।'
এছাড়া শ্রীশ্রীঠাকুর আরো বলেছেন,
🔯 'মাতৃভক্ত যারা, তারা প্রায়ই
সুখী হয়, বড় হয়,
কোমলহৃদয় হয়। '
🔯 'কাম-কুহেলে পড়িস্ যখন আমার কথা শোন্-মাতৃচিন্তা-বিভোর হয়ে সৎকাজে দিস্ মন।'
🔯 'মাতৃসেবার অমোঘ টানে চল ওরে তুই চল,
থাকবি হ’তে বীর্য্যবান পাবিই বুকে বল।'o
🔯 মাতৃভক্তি অটুট যত
সেই ছেলে হয় কৃতি তত।
🔯 ধাত্রী যা'রা পাত্রী যা'রা
হোত্রী-নেত্রী-প্রাণ,
আহৃতিদক্ষা পোষণ-দীপ্তা
লক্ষ্মী লোকত্রাণ ;
শিষ্টা নারীর বিশেষ স্বভাব
ঐ তো নারীর স্থান । ৩।r
বর্তমানে সমাজের কিছু মানুষের কাছে নারী যেন শুধুই ভোগবস্তু। যাদের ঘরে নারী নির্যাতন, ডিভোর্স সহ ঘৃণিত কর্মকাণ্ডে ভরা তারাই আজ শ্রীশ্রীঠাকুরের কিছু বাণীর অপব্যাখা করেo শ্রীশ্রীঠাকুরকে নারী বিরোধী বলে প্রচার করতে ব্যস্ত।y
নারী তথা মায়েরা যেন নিজেদের কমজোর না ভাবে এবং সকল প্রতিকূলতা জয় করতে পারে তাই শ্রীশ্রীঠাকুর উৎসাহ দিয়ে বাণীতে বললেন,
🔯 ধর্ষণমুখী যদিই বা হ'স্
পরাক্রমী মেয়ে,
মারবি না হয় মরবি তখন
রাখিস্ কীর্ত্তি ছেয়ে ! । ৮০।
🔯 বহ্নিশিখায় খোপা বেঁধে
পাপহননী ত্রিশূল ধর্ ,
সিংহ-ধাওয়ায় খড়্গ নিয়ে
অসুরবুদ্ধি নিপাত কর্ । ৮২।
🔯 দশপ্রহরণ দশহাতে ধর
বক্ষ বিদরি' ধ্বংসি' ইতর,
সূর্য্যরাগী বজ্র তেজে
আর্য্যনারী ! শত্রু টোট্ । ৮৩।
🔯 বুকের আগুন দাউদহনে
সাধ্বী মেয়ে জ্বালিয়ে তোল্ ,
বৃত্তিজ্ঞানীর ইতর নীতি
পুড়িয়ে হুলুর কর্রে রোল । ৮৪।
🔯 সাধ্বী তোরা নারী তোরা
ফাগুন রাগে আগুন জ্বাল্ ,
দুর্ব্বিনীত ইতরামি যা'
জ্বালিয়ে ফ্যাল্ পুড়িয়ে ফ্যাল্ । ৮৬।
✳ শঙ্খ ফুঁকে অমর হাঁকে
উচ্চ রোলে পরুষ-বুক,
তাথৈ থিয়ায় নাচাও নারী
বর্ম্মে ঢেকে মৃত্যুমুখ। ৮৭।
🔯 সতীর তেজে ঝল্সে দে মা
নিঠুর-কঠোর অন্ধকারে,
মদন-ভস্ম বহ্নি-রাগে
বৃত্তিরিপু দে ছারখারে ;
প্রণবতালে ইষ্ট-মন্ত্রে
ঝঙ্কারি' তোল্ সকল তন্ত্রে,
বিষাণ-হাঁকে রুদ্র দোলায়
বজ্র হানি' মৃত্যুদ্বারে ;
আয় ছুটে আয়, আয় মা আমার !
ধর দীপকে আর্য্যতান,
ফুলিয়ে তোল্ , দুলিয়ে তোল্
তাথৈ তালে আর্য্যমান । ৮৯।
❇ ইতর নীতির প্রগতি-পথ
শম্ভুশূলে কর্ নিরোধ,
মেয়ে আমার, সতি আমার!
খড়গশূলে রোধ্ নিরোধ। ৮১।
[অনুঃ১ম, নারী-পুরুষ]
নারীরা খুব স্পর্শকাতর অশ্রদ্ধা, অবহেলা, অসন্মান ঘৃণা, রাগ ক্ষোপ, গালিগালাস,
অল্প পরিমাণ হলেও গ্রহণ করতে পারেনা।
কিন্তু সমাজ নারীদেরকে এই নিকৃষ্ট উপাদানের জালে আটকে রেখেছে এক কুচক্রী মহল ।r
অন্যদিকে সৎসঙ্গ শিক্ষা দেয় নারীদের সম্মান করার। তাইতো সৎসঙ্গের কীর্তনে নারীদের সম্মান করে গাওয়া হয়,
'জাগো লক্ষী মায়ের দল
তোমরা না জাগলে
মাগো দেশের অমঙ্গল '
শ্রীশ্রীঠাকুর শিবের বুকে মা কালীর পা এর উদাহরণ টেনে বললেন,
শিবের বুকে শ্যামা যদি না নাচে, তবে conscious
(সচেতন) হয় না। আবার, ধেই-ধেই -নৃত্য -পরা শ্যামা হওয়া চাই। [আ:প্র: ২২/৩০৮]
সৎসঙ্গীরা অন্যদের মত মুখে মুখে নারীপ্রেম এর কথায় সীমাবদ্ধ নয় তারা শ্রীশ্রীঠাকুরের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মনে প্রাণ বিশ্বাস করে
নারীরা জাগ্রত হলে তবেই দেশ ও জাতির প্রকৃত মঙ্গল বয়ে আসবে। roy
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছেন, “মা-কেন্দ্রিক শিশুরা নম্র,শান্ত ও উদার প্রকৃতির হয়”।
শিশুকাল থেকেই ভালবাসার চর্চা করতে হবে। পিতার খেয়াল রাখতে হবে মায়ের প্রতি সন্তানের ঝোঁক যেন বাড়ে।
(আলোচনা প্রসঙ্গে,৭ম খন্ড, ৯/৫/১৯৪৬)
মেয়েদের মাতৃত্বকে শ্রীশ্রীঠাকুর সদা সর্বদা বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মেয়েদের মাতৃস্বরূপকে। আদর্শ জননী হয়ে উঠার পথগুলি ভারতীয় নারীদের সামনে তুলে ধরেছেন। তাই তিনি মেয়েদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন-
অন্যত্র শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন,
"ছেলে-মেয়ের প্রথম শিক্ষার শুরু হয় মায়ের কাছে। তাই আচার, ব্যবহার, অভ্যাস নিয়ন্ত্রিত হওয়া উচিত। সন্তান যেমন হউক না কেন মায়ের প্রতি ভালোবাসায় বা টানে তার বৃত্তি কাবু হলে তার ইন্নতি হবেই হবে। সেবা যত্ন দিয়ে আদর্শ মা সন্তানকে সবসময় রাখবেন সুখী ও তৃপ্ত।"
নারী নিজে প্রকৃত শিক্ষিত হলে তবেই সে ছেলেমেয়েকে প্রকৃত শিক্ষিত করতে পারবে।প্রকৃত নারী'ই এমনতর চরিত্রে অধিকারিণী হতে হবে যে চারিত্রিক দ্যুতি নারী জীবনকে তার বৈশিষ্ট্যের ভিতর দিয়ে সার্থকমন্ডিত করে তুলতে পারবে।
পরিশেষে পরমদয়ালের কাছে বিশ্বের সকল নারীদের, মায়েদের সুস্থ, সুন্দর, বিপদমুক্ত জীবন প্রার্থনা জানিয়ে লেখাটা শেষ করছি।
________________________________________
Comments
Post a Comment