একেকটি ছবি যেন একেকটি মাহেন্দ্রক্ষণকে, আবেগঘন স্মৃতিকে বহন করে। সম্প্রতি একটি ছবি নেট দুনিয়ায় সৎসঙ্গী মহলে খুব ঘুরছে। শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের প্রৌপৌত্র অর্কদ্যূতি চক্রবর্তী(পরম পূজনীয় বাবাইদাদা)-কে জাপটে কোলে তুলে গাড়ি থেকে নামাচ্ছেন এক ব্যক্তি। ছোটখাটো গড়ন। পূজনীয় বাবাইদাদা হাসছেন। তাঁর সেই ভুবনভুলানো হাসি। সে এক রঙ্গ যেন।
এই ছবিটির নানা ব্যাখ্যা শুনেছি। কেউ বলেছেন~বাবাইদাদার বিয়ের সময় এই ঘটনা। নানা মত। নানা জল্পনা, কল্পনা। সারা পৃথিবীতে কোটি কোটি সৎসঙ্গী। ভাবুন, কী পরিণাম আলোড়ন!
পূজনীয় বাবাইদাদা দিব্য মনোমোহন গৌরাঙ্গ দীর্ঘদেহী পুরুষ। নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে সম্ভ্রমের সঙ্গে সকলেই প্রণাম নিবেদনাদি করেন। সাধারণ মানুষ থেকে রাষ্ট্রনেতা। অমন ঐশীব্যক্তিত্বসম্পন্নকে অমন করে একটি ছোটখাটো মাঝারি কোনো ব্যক্তি এভাবে কোলে তুলে নামাচ্ছেন~এটা তো সাধারণ সচরাচর ঘটনা হতে পারে না। সকলেরই কৌতূহল হবে~ ছবিটির মাহাত্ম্যটি কী!
আমার মনে পড়ল~একবার ইউরোপ যাত্রাকালে রবীন্দ্রনাথ পণ্ডিচেরীর শ্রীঅরবিন্দ-আশ্রমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন জাহাজে। হঠাৎ মনে এল ঋষি শ্রীঅরবিন্দর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এদিকে জাহাজঘাটা নেই। নোবেলজয়ী কবিকে তাই জাহাজের ক্রেনে কাঠের পিঁপের মধ্যে মোড়ায় বসিয়ে পাড়ে নামানো হয়েছিল। কবি ক্রেনের ডগায় বসে দুলতে দুলতে নামছেন, মৃদু মৃদু হাসছেন, আর ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা আনন্দে হাততালি দিচ্ছে...! ভাবুন তো কত মজার মুহূর্ত!
পূজনীয় বাবাইদার এই ছবিটির নেপথ্য-কাহিনিটিও অবশেষে পাওয়া গেল। খুবই মজার। দেওঘরে আছেন আমাদের উজান অসমেরই পবিত্র দাস, আচার্যদেবের নিত্যসেবকদের একজন। তাঁর কাছেই শুনলাম ঘটনাটি। যে-ব্যক্তিটি বাবাইদাদাকে কোলে তুলে নামাচ্ছেন~তাঁর নাম রোখেশ্বর খনিকর। উজান অসমের শিবসাগর সৎসঙ্গ মন্দিরের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবীণ কর্মী তিনি। বাবাইদাদা একেবারে ছোটবেলা প্রথম যখন গুয়াহাটি বিমান বন্দরে মায়ের সঙ্গে নেমেছিলেন, তখন এই খনিকরদাই তাঁকে কোলে করে বিমান থেকে নামিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে ব্রহ্মপুত্র দিয়ে বহু জল গড়িয়ে গেছে। ১৯৯৬-র ৪ ফেব্রুয়ারি, শিবসাগর সৎসঙ্গ মন্দিরটির শুভ উদ্বোধন করতে পূজনীয় বাবাইদা ওখানে গেছেন। তাঁকে স্বাগত জানাতে খনিকরদা সকলকে নিয়ে উপস্থিত। বাবাইদা হেসে তাঁর শৈশবস্মৃতিকে মনে করে বলেছিলেন~"কী খনিকরদা, ছোটবেলা প্রথম অসমে যখন আসি, আপনি আমাকে কোলে করে নামিয়েছিলেন। এবারে কে নামাবে?" ব্যস, খনিকরদা অমন ছোট চেহারা নিয়েই দীর্ঘদেহী বাবাইদাকে কোলে নিলেন, নামালেন। ছোটবেলার বাবাইদাদা আর বড়বেলার বাবাইদাদা খনিকরদার কাছে একাকার হয়ে গেলেন। আচার্যপ্রতিভূ প্রভুর প্রতি অচ্যূত অনুরাগের এক অনন্য উদাহরণ হয়ে রইল এই ছবিটি।
প্রশান্ত চক্রবর্তী
২০২১
Comments
Post a Comment